‘ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল না হওয়ার কারণে সম্প্রচার সঠিকমতো হয় না, একইসাথে সরকার অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে’ যুক্তি তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, ‘দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। কিন্তু ক্যাবল নেটওয়ার্ক এখনো ডিজিটাল হয়নি। এটিকে অবশ্যই ডিজিটাল করতে হবে। আমরা এই বিষয়ে সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। ক্যাবল নেটওয়ার্ক যারা পরিচালনা করেন তারা একটি সময়সীমার মধ্যে পুরো ক্যাবল নেটওয়ার্ককে ডিজিটাল করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পূর্বসভার ধারাবাহিকতায়ই আজকের সভা।’
সম্প্রচার অঙ্গনে শৃঙ্খলা আনতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বহু অনিয়ম ছিল, সেগুলো দূর করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিশেষত: সম্প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের সিরিয়ালগুলো মানা হতো না। দেখা যেত যে বিদেশি টেলিভিশনে সিরিয়াল আগে এরপরে বাংলাদেশি টেলিভিশনের সিরিয়াল। বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরও অতীতে বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সিরিয়াল কোনোভাবেই মানা হচ্ছিল না।’
‘কয়েকমাস আগে টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন-এটকো’র সাথে আলোচনা করে টিভি চ্যানেলগুলো স¤প্রচার শুরুর তারিখ অনুযায়ী ক্রম ঠিক করে সেটি কেবল অপারেটরদেরসহ সম্প্রচারের সাথে যুক্তদেরকে দিয়ে সেটি মানার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একইসাথে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু করি। তারপর এখন বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে এই সিরিয়াল মানা হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গা ব্যত্যয় হলেও সেগুলোতে আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি এবং করবো।’
বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে প্রাধান্য দেশের শিল্পী, দেশের টিভির
বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে দেশের শিল্পী, দেশের টিভিকে প্রধান্য দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনের ওপরই চলে। এবং আমাদের দেশে এখন ৩৩টি টেলিভিশন চ্যানেল স¤প্রচারে আছে, ৪৫টির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এবং এই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এখানে শত শত নয় কয়েক হাজার সাংবাদিক, সংবাদকর্মী এগুলোর সাথে যুক্ত। শুধু সাংবাদিক, সংবাদকর্মীই নয়, এরসাথে আরো নানাবিধ ব্যবসাও যুক্ত। যেটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
ড. হাছান বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি যে, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হয়, অর্থাৎ বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল, বিদেশি বিজ্ঞাপন তো আছেই। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কোন ধরণের বিজ্ঞাপনেই বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শিত হতে পারে না। আমরা এই নির্দেশনা জারি করার পর, আইনটি মনে করিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার বন্ধ হয়েছে।’
‘কিন্তু এখনো বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শিত হচ্ছে’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এরমধ্যে অনেকগুলো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেশেও বাজারজাত করা হয় বিদেশেও বাজারজাত করা হয়। যদিও বাংলাদেশে বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ হয়েছে কিন্তু বিদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন আইন অনুযায়ী প্রদর্শন করা যায় না এবং এটি আইনের লঙ্ঘন। এগুলো আলোচনা করার জন্যেই আজকে যারা স¤প্রচারের সাথে যুক্ত তাদের রাখা হয়েছে। এবং আমাদের শিল্পীদের বঞ্চিত করে বাইরের শিল্পী দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর ওপর কি পরিমাণ ট্যাক্স হবে, তা নির্ধারণে ইতোমধ্যেই আমরা সংসদ সদস্যদের চিঠি দিয়েছি। সবার সাথে আলোচনা করেই আমরা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
বিদেশি সিরিয়াল সেন্সর হয়ে সম্প্রচার
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি চলচ্চিত্র বানানোর পর সেটি যেখানে সেন্সর বোর্ড হয়ে সম্প্রচারে আসতে হয়। বিদেশি সিরিয়াল যেটি একবার নয়, পঞ্চাশবার, একশবার পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে, সেটি সেন্সর ছাড়া প্রদর্শন হওয়া মোটেও সমীচিন নয়। এটির জন্য পূর্বানুমতিও লাগে। আমরা ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশনা জারি করেছি। এবং যারা প্রদর্শন করছিল, তারা দরখাস্ত করেছে। যেগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা-বিবেচনা করে অনুমোদন দিচ্ছি, যাতে প্রদর্শনে ব্যত্যয় না ঘটে। কিন্তু ভবিষ্যতে এগুলো অবশ্যই সেন্সর হয়ে আসতে হবে। সেজন্য আমরা একটি কমিটি করে দিচ্ছি। খুব সহসা সেই কমিটি আমরা ঘোষণা করবো।’
১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে অবৈধ ডিটিএইচ
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি অনেক বিত্তবান পরিবারেও দেখা যাচ্ছে, অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ লাগিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে দেশি এবং বিদেশি চ্যানেল দেখার এবং প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিদেশি কোনো ডিটিএইচকে বাংলাদেশে স¤প্রচার করার জন্য সরকার অনুমতি দেয়নি। এর জন্য হুন্ডি হয়ে বছরে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে এই খাতে পাচার হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই নির্দেশনা জারি করেছি যে, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ সরিয়ে নিতে হবে। যারা এগুলো লাগিয়েছেন এবং যারা ব্যবহার করছেন, দু’পরে ওপরই এই দায়িত্ব বর্তায়। এরপর আমরা যেখানে এই অবৈধ সংযোগ পাবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
‘ক্যাবল টেলিভিশন পরিচালনা আইন ভেঙে যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংগঠন করেন তাহলে অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড, অনধিক এক লাখ টাকা, অনুন্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং দ্বিতীয়বার করলে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড, দুই লাখ টাকা অনুন্ন এক লাখ টাকা অর্থদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে’ আইন থেকে উদ্ধৃত করেন তথ্যমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড, যাদু ভিশন লিমিটেড এবং ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের প্রতিনিধিবৃন্দ ও ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অভ্ বাংলাদেশ-কোয়াবের প্রতিনিধিবৃন্দ ও সরকার নিযুক্ত কোয়াব প্রশাসক মোস্তফা জামাল হায়দার সভায় অংশ নেন।