দর্পণ ডেস্ক : ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ভূমির মালিকানা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তরপ্রদেশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রায় ঘোষণার আগে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টার অভিযোগে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার সকাল দেশটির সুপ্রিমকোর্ট কয়েক দশকের পুরোনো এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ভারতের শীর্ষ এই আদালত জানান, শনিবার সকালের দিকে বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ভূমির মালিকানা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। অযোদ্ধার ঐতিহাসিক এই মসজিদের স্থানকে দেশটির হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাম মন্দিরের ভূমি দাবি করে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করতে চান।

অযোধ্যার বিতর্কিত এই ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুরা অযোদ্ধায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।

হিন্দুরা মনে করেন, তাদের দেবতা রামের জন্মভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন, বাবরি মসজিদের স্থানে রামের জন্মের কোনো আলামত নেই। সুপ্রিমকোর্টের এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লির পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারণার অন্যতম হাতিয়ার ছিল উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা মসজিদ-মন্দির। ১৯৯২ সালে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়, তখন বিজেপির বর্তমানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা পৃথকভাবে সেই ধ্বংসযজ্ঞে ভূমিকা রেখেছিলেন।

২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।

উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বিজেপির নেতা ও মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে প্রায় ২০ কোটি।