অনলাইন ডেস্ক : গত বছর ব্যবসা ভালো যায়নি। কিন্তু তাতে কি? ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা থেমে নেই। নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি শুরু করেছেন রাজধানীর মিরপুর বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরা।
আগামী রোজার ঈদে প্রায় ১৫ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তারা। এর মধ্যেই নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে দোকানে তোলার পালা। ঈদ সামনে রেখে পল্লীজুড়েই চলছে সাজ সাজ রব। বৃহস্পতিবার সরেজমিন বেনারসি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
মিরপুর বেনারসি পল্লী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম যুগান্তরকে বলেন, গত বছর নানা কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো যায়নি। কাক্সিক্ষত বেচা-বিক্রি হয়নি।
কিন্তু এবার আশা করছি শতাধিক দোকানে ১০-১৫ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি হবে। আগামী ঈদে দেশি শাড়ির কালেকশন বাড়ানোর প্রতি সব ব্যবসায়ীই মনোযোগ দিয়েছেন। তাছাড়া ক্রেতাদের মধ্যেও দেশীয় শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঈদের প্রস্তুতি শেষের পর্যায়ে। ৫-৭ দিনের মধ্যেই ঈদের কালেকশন পুরোপুরি শো-রুমে চলে আসবে।
পাবনা বেনারসি মিউজিয়ামে গিয়ে দেখা যায় বাহারি সব নাম, রঙ ও ডিজাইনের শাড়ির বিপুল সমাহার। তবে ঈদের সব শাড়ি এখনও আসেনি। দোকানের কর্মকর্তা মো. আমীর জানান, তার দোকানে মিরপুর কাতান পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
এছাড়া অপেরা কাতান ৬-৭ হাজার টাকা, কাঞ্জিভরন (পিয়র) ১৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা, মিরপুরের খাদি ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বিল্লু রানী ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বিয়ের বেনারসি ৩ থেকে ৪০ হাজার টাকা, ভারতীয় পাটি লেহেঙ্গা ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ঢাকাই জামদানি ৩ থেকে ৩০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি ৮শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সফট সিল্ক আড়াই হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, ইন্ডিয়ান গাদোয়াল ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা (এর মধ্যে সুতি ও কাতান দু’ধরনেরই শাড়িই রয়েছে)।
দিয়া শাড়ির কর্মকর্তা সিরাজ শেখ জানান, তাদের দোকানে নিজস্ব তৈরি কাতান শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ১ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া ঢাকাই জামদানি ২ থেকে ১০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি ১২শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সিল্ক (হাফ ও ফুল) ১২শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, মিরপুর বেনারসি ব্রাইডাল শাড়ি ৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা, শিপন দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, জর্জেট প্রিন্ট ১-৩ হাজার টাকা এবং কাঞ্জিভরন (কাতান) পাওয়া যাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ঈদের মাল আসতে আর ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগবে।
নিউ বেনারসি বুননের মালিক রঞ্জু জানান, তার দোকানে শুধু মিরপুর কাতান শাড়ি বিক্রি হয়। এসব শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এবার ঈদে অনেক ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
বেনারসি পল্লীর বিগবাজার, রূপ সিঙ্গার, এশিয়া বাজার, পাবনা এম্পেরিয়াম, জারাসহ বিভিন্ন দোকানে রয়েছে বিশাল শাড়ির সমাহার। এসব দোকানে কর্মকর্তারা জানান, আগামী ঈদ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু কিছু কালেকশন এর মধ্যেই এসেছে।
বেশিরভাগই এখনও আসেনি। তবে কারিগররা অর্ডার অনুযায়ী কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং কাজ। আশা করা হচ্ছে রমজান শুরুর আগেই ঈদের শাড়ি সংগ্রহ করতে পারবেন ক্রেতারা।
বেনারসি পল্লীর একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একদিকে পাইকারি শাড়ি পাঠিয়ে দেশের বাজার সয়লাব করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে ভিসা সহজ করায় খুচরা ক্রেতারাও ছুটে যাচ্ছেন কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য শহরে।
ফলে আমরা দু’দিক থেকেই মার খাচ্ছি। সরকারের উচিত ব্যবসায়ী ও দেশের স্বার্থে এ বিষয়টির দিকে নজর দেয়া।