ফাইল ফটো

প্রাণের ভয়ে কয়েকদিন রাখাইন রাজ্যের এদিকে ওদিক ছুটে এক পর্যায়ে অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পান। এরপর মাকে কাঁধে নিয়ে ৬৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি।

নিজের মাকে বহন করে দেশ ছেড়ে আসার দুর্বিষহ এ অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান জাফর আলম।

জাফরের বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। তার মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না খুব একটা। বৃদ্ধার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে জাফরই সবার ছোট।

জাফর বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত তার গ্রামের বাড়ি বলিবাজারের সঠিক দূরত্ব আমার জানা নেই। তবে লোকে মুখে শুনেছি সীমান্ত থেকে বলিবাজারের দূরুত্ব ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার হবে। পায়ে হেঁটে গেলে দু’দিন লাগে। আঁকা-বাঁকা পথ, বেশির ভাগ এলাকায় যানবাহন নেই। যতটুকু রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতো, তাও বন্ধ। এছাড়াও পথে পথে চেকপোস্ট। এ কারণে বিকল্প পথ হিসেবে পাহাড়-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। এজন্য সময় লেগেছে পাঁচ দিন।

তিনি বলেন, এতো দিনের এই দৌড়ঝাঁপের কারণে আমার মা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনাহারে অর্ধাহারে সঙ্গে থাকা অন্যান্যদের সহযোগিতায় কোনো মতে নো-ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছাই। সেখানে একদিন অবস্থান নেয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের বস্তিতে উঠি। তবে মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে আবারও কাঁধে নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পের ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে যাই। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশসহ অনেক রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ নানা ধরণের নির্যাতন করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।