বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, পরিচালনা কাঠামো ও পদ্ধতিগত পরিবর্তনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিকভাবে তার শীর্ষস্থান ধরে রেখে
জেনেভাভিত্তিক স্বাধীন গণমাধ্যম সংস্থা ‘‘এনজিও অ্যাডভাইজার’’ কর্তৃক টানা পঞ্চমবারের মতো বিশ্বসেরা এনজিও-র স্বীকৃতি পেয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাক। বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, পরিচালনা কাঠামো ও পদ্ধতিগত পরিবর্তনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিকভাবে তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
এই স্বীকৃতিলাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ব্র্যাক গ্লোবাল বোর্ডের চেয়ারপারসন আমিরা হক বলেন, ‘‘এই সম্মান পেয়ে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ২০২০ সাল হচ্ছে প্রথম বছর যখন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর উত্তরাধিকারের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে এবং সব ধরনের শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, এই দৃঢ় অঙ্গীকারের স্মারক হিসেবে আমরা এই স্বীকৃতিকে গ্রহণ করছি।’’
বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে প্রায় পাঁচ দশকের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি ব্র্যাক ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর্মকৌশল ঘোষণা করেছে। এই কর্মকৌশলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কার্যক্রমের বিস্তার, সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের সেবা প্রদান এবং উন্নয়ন খাতে সহযোগিতা ও জ্ঞান-অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বের শক্তিশালী করার ওপর। এই কর্মকৌশল পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালেই ব্র্যাকের গ্লোবাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
আমিরা হক আরও বলেন, ‘‘ব্র্যাকের বৈশ্বিক কর্মকৌশলে স্যার ফজলে আমাদের জন্য দুঃসাহসী লক্ষ্য স্থির করে দিয়ে গেছেন, তা হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ২৫ কোটি মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটানো যাতে করে তারা নিজেদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা প্রতিদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’’
এনজিও অ্যাডভাইজার-এর প্রধান সম্পাদক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জন-ক্রিস্টফ নথিয়াস বলেন, ‘‘এ বছর বিশ্বের এনজিও র্যাংকিংয়ে ব্র্যাকের প্রথম স্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মূল ভূমিকা পালন করেছে তা হলো, উদ্ভাবন এবং ফলাফল বা প্রভাব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পুনর্ব্যক্ত অঙ্গীকার এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ও পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত পূর্বপ্রস্তুতি।’’
লিখিত বিবৃতিতে ক্রিস্টফ নথিয়াস আরও উল্লেখ করেন, ‘‘২০২০ সালের এই তালিকা প্রকাশকালে আমরা উৎফুল্ল এ কারণে যে, সামাজিক মুনাফার ক্ষেত্রগুলো বিশ্বের রূপান্তর ও বিকাশে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে ২০১৯ সালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন মর্যাদা ও মানবিকতায় অনন্য একজন ব্যক্তি। যে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আমাদের আরাধ্য, তিনি ছিলেন সেই প্রচেষ্টার পুরোভাগে। আমরা বিশ্বাস করি ব্র্যাক তার প্রতিষ্ঠাতার প্রতি ভালবাসা ও সমর্থন অক্ষুণœ রেখে সামাজিক মুনাফা খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাবে।’’
এনজিও অ্যাডভাইজার প্রতি বছর বিশ্বের ৫০০ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এই তালিকা তৈরি করে। এই র্যাংকিংয়ে বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- সবার জন্য উন্মুক্ত তথ্য-উপাত্ত, কার্যক্রমের প্রভাব ও নতুনত্ব, পরিচালন কাঠামো এবং স্থায়িত্ব। অর্থাৎ যেসব সংগঠনের উদ্ভাবনী কর্মসূচি বা উদ্যোগ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই এবং সুদূরপ্রাসারী প্রভাব রেখেছে, তাদেরকেই এই র্যাংকিংয়ে বিবেচনা করা হয়। এই বছর শীর্ষ পাঁচে স্থান পাওয়া অন্য এনজিওগুলো হচ্ছে মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (ডক্টর উইদাউট বর্ডারস), ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিল, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনস এবং মার্সি কোর।