‘কবি গান শুনতে আশাপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতশত হিন্দু-মুসলিম একত্রিত হন। অনুষ্ঠানটি আমাদের এলাকার অসাম্প্রদায়িক চেতনার অংশ’
ঐতিহ্যবাহী কবি গান এখন বিলুপ্তপ্রায়। একসময় গ্রামে-গ্রামে নিয়মিত এর আয়োজন হলেও এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে কোথাও কোথাও বছরে একবার হলেও আয়োজন করা হয় কবি গানের প্রতিযোগিতা। তেমনই একটি জায়গা মাগুরা সদরের পথেরহাট কালি মন্দির।
বুধবার (৪ মার্চ) রাতে মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কবি গানের লড়াই। গত দেড়শ বছর ধরে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে কালি পূজার পরদিন এ মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ কবি গানের আসর।
এই বছরের প্রতিযোগিতায় মাগুরার বেড়ইল চেঙ্গারডাঙ্গী গ্রামের কবিয়াল আশুতোষ সরকারের বিপরীতে অংশ নেন ফরিদপুরের সহদেব সরকার।
সাকার ও নিরাকারের উপাসনা বিষয়ে কবি গানের এ লড়াই চলে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে। ঢোল, করতাল, মন্দিরা, কাশি বাশির সুরের সঙ্গে কবিয়ালদের কথা ও সুরের লড়াই উপভোগ করেন এলাকার বিভিন্ন বয়সের সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার মানুষ। নারী দর্শকের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
আয়োজকরা জানান- শতাধিক বছর ধরে চলে আসা এ মন্দিরের কবি গানের আসরে এক সময় বিখ্যাত কবি বিজয় সরকার, রসিক সরকার, গৌর নিতাইসহ বিভিন্ন বিখ্যাত কবিয়ালরা লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক নিত্য গোপাল বিশ্বাস, গোপাল অধিকারী, অসিত দাসসহ অন্যান্যরা জানান- প্রায় ৬ পুরুষ ধরে চলে আসা এ কবি গানের আসরটি এলাকার মানুষের বিনোদনের অন্যতম উৎস। এলাকার হিন্দু মুসলমান সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে অংশ নেন। এখানকার মানুষের ঘরে ঘরে উৎসব শুরু হয় এই সময়টাতে।
স্থানীয় গোয়ালবাথান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত মুন্সী জানান, কবি গান শুনতে আশাপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতশত হিন্দু-মুসলিম একত্রিত হন। অনুষ্ঠানটি আমাদের এলাকার অসাম্প্রদায়িক চেতনার অংশ। আমরা সবাই মিলেই এ আয়োজনকে উৎসাহিত করে আসছি।