মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে আসছিলেন বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম। হাতে ছিল ভাঁজ করা একটা সাদা কাগজ। ভাঁজের ভেতরে কালো অক্ষরে যে কঠিন সিদ্ধান্তের কথা লেখা আছে, কে জানত। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে চেয়ার টেনে বসার পরই মিডিয়া ম্যানেজার বললেন, ‘একটা ঘোষণা আছে।’ কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে থাকেন মাশরাফি, ‘অধিনায়ক হিসেবে কাল (আজ) আমার শেষ ম্যাচ।’ পিনপতন নীরবতা নেমে আসে ভরা সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। লিখিত ঘোষণায় কৃতজ্ঞতা পর্ব পাঠ করতে থাকেন নড়াইল এক্সপ্রেস। সবাই মনোযোগী শ্রোতা। পত্রপাঠ শেষ হলে, প্রশ্ন-উত্তর পর্বে উঠে আসে অনেক না বলা কথা। সে যাই হোক, অধিনায়ক মাশরাফি আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে খেলবেন। নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই নড়াইল এক্সপ্রেসের এই পদত্যাগ। ওসব পরের ভাবনা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজকের সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডে নিয়েই ভাবতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। তারা চাইবেন, সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে অধিনায়কের বিদায় রাঙাতে।
নেতার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টি২০ ম্যাচেও ভালো খেলার প্রেরণা ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। ২০১৭ সালে কলম্বোর সেই টি২০ ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও জয়ের ছন্দ ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকবে। নেতৃত্বের শেষ ম্যাচ মাশরাফিও হয়তো আবেগী হবেন। সেরা বোলিং করার চেষ্টা থাকবে তার। কারণ তিনি লড়াকু। নিজেকে প্রমাণ করেই ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। যে সিরিজে সব সংস্করণেই জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল স্বাগতিকরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে ঘটনাবহুল সিলেট পর্বের শেষটায় নতুন কোনো ঘটনার জন্ম না নিলেই হয়। মাশরাফির নেতৃত্বে ৮৭টি ম্যাচ খেলে ৪৯টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সংখ্যাটা ৫০ হবে আজ, ৮৮তম ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লে।
নড়াইল এক্সপ্রেসের আবেগী ম্যাচে খেলবেন না মুশফিকুর রহিম। পাকিস্তানে যে একাদশ খেলবে তাদেরই সুযোগ দেবেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আগেই বলে দিয়েছেন মুশফিককে না রাখার বিষয়টি। তার জায়গায় সৌম্য সরকারকে খেলানো হতে পারে। শেষ ম্যাচে ক্যাচ নেওয়ার সময় ডান হাতে চোট পাওয়ায় একটি সেলাই লেগেছে নাজমুল হোসেন শান্তর। বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকেও। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বিশ্রামে থাকা সাইফউদ্দিন ফিরতে পারেন। সুযোগ দেওয়া হতে পারে মুস্তাফিজকেও। পূর্ণ শক্তির পেস ইউনিট নিয়ে নামার কারণও আছে, গুরুত্বপূর্ণ দু’জন ব্যাটসম্যান না খেললে ব্যাটিংয়ে একটু হলেও প্রভাব পড়তে পারে। বোলিং বিভাগ ক্লিক করলে সেটা পুষিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস ছন্দে আছেন। দু’জনই পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা পান। লম্বা সময় চাপে থাকা তামিম ওয়ানডেতে দেশের রেকর্ড স্কোর করেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচেও জুটিতে বড় ইনিংস খেলতে ফোকাস করবেন তারা। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও রানে ছিলেন। যদিও মাহমুদুল্লাহ, মিঠুনদের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সুযোগ পেলে আজ কাজে লাগাবেন তারাও। গত ম্যাচে বোলিং কাঙ্ক্ষিত মানের ছিল না। বিশেষ করে পেস বোলাররা সেরাটা দিতে পারেননি। আল-আমিন হোসেন ও শফিউল ইসলাম ছিলেন বেশ খরুচে। জিম্বাবুয়েকে অলআউট তো করা যায়ইনি, বরং জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল শন উইলিয়ামসের দল। সফরকারীদের বড় অর্জন ছিল শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচ টেনে নিয়ে যাওয়া। কোনো সন্দেহ নেই, হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আজ মরণ কামড় দেবে তারা। সেখানে সব আবেগ ঝেড়ে ফেলে জিততে সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে টাইগারদের। মাশরাফির প্রত্যাশা টিম বাংলাদেশের কাছে, ‘প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই সবার দায়িত্ব সম্পর্কে জানে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততে সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে আমাদের। মাথায় রাখতে হবে গত ম্যাচে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে তারা। খুব কাছাকাছি নিয়ে গেছে। যদিও ম্যাচটা আমরাই জিতেছি। আশা করি জিনিসগুলো মাথায় রেখেছে প্রত্যেকে।’ গত দু’দিন টানা প্রস্তুতিতে ছিল জিম্বাবুয়ে। সিলেটের কন্ডিশনে অনেকটাই মানিয়ে গেছে তারা। সুতরাং মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ রাঙাতে হলে ব্যাটে-বলে রঙিন হতে হবে ক্রিকেটারদেরও।