বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন নাটোরের দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনের আশ্রিতা নুরজাহান বেগম। এতিম নুর জাহানের বিয়েকে ঘিরে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে বিয়ে বাড়ির আদলে সাজানো হয়েছিল। বিয়েতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি, ইউএনওসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।

দু’দিন ধরে চলে নুরজাহানের গায়ে হলুদের উৎসব। রীতি অনুযায়ী বর যাত্রীদের সম্মান জানানো হয়। বেশ ধুমধাম করেই বিদায় জানানো হয় নুরজাহানকে। বর শহরের কান্দিভিটা এলাকার মজিবর রহান ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে মিজানুর রহমান প্রায় ২৫ জন বরযাত্রী নিয়ে শুক্রবার দুপুরে হাজির হন দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনে। বরযাত্রী, সদনের আশ্রিত ও কর্মকতাসহ প্রায় ৩শ অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। 

আমন্ত্রিত অতিথিরা জানান, দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনে এমন ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান এটিই প্রথম ।

এতিম কন্যা নুরজাহানের অভিভাবক হয়ে বিদায় জানাতে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। হাজির ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম রাব্বী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফুন্নেসা, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, সদন পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি ডা. আবুল কালাম, এমকে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু, সদন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, কোষাধ্যক্ষ মনিমুল হক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এটিএম জালাল উদ্দিন প্রমুখ। পরে এই নব দম্পত্তিকে দোয়া করেন সকলেই। 

বিবাহ অনুষ্ঠানের আগে আয়োজন করা হয় গায়ে হলুদ ও থুবড়া (মিষ্টিমুখ) খাওয়ানো অনুষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার থেকে সদনের আশ্রিত প্রায় ৮০ জন বালিকা এই বিয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। সদনের সকলেই সেজেছিল নতুন সাজে। তারা আনন্দ উল্লাসে কাটিয়েছে দু’দিন। 

সদনে আশ্রিত দোলেনা, সাথী খাতুন, বিজলী রানী, জেসমিন ও সাবরিনা জানায়, তারা কখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করতে পারেনি। এমন আনন্দ উপভোগ কখনও করেনি তারা। 

তারা বলে, নুরজাহান আপুর বিয়েকে ঘিরে আমারা নেচে গেয়ে আনন্দ করেছি গত দু’দিন ধরে। আমরা সকলেই নতুন পোশাকে সেজেছিলাম। বেশ আনন্দেই ছিলাম আমরা। তবে নুরজাহান আপু শশুর বাড়ি চলে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। 

বর মিজানুর রহমান বলেন, নুরজাহানকে বিয়ে করে আমি গর্বিত। বেশ ভাল লাগছে। আমাদের বিয়েতে সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের মানুষ হাজির হওয়ায় বেশি ভাল লাগছে। আমরা দু’জন যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারি সবাই সেই দোয়া করবেন।

দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, নুরজাহান বেগম শহরের মল্লিকহাটি এলাকার মরহুম মকবুল হোসেন ও নুরনাহার বেগমের মেয়ে। সে এই এতিম খানায় ১৪ বছর ধরে রয়েছে। এইচএসসি পাশ করার পর এতিমের কোটায় নাটোর কালেক্টরেট অফিসে চাকরি পায় সে। সদনের নিজস্ব ব্যয়ে তার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, এতিমের কোটায় কর্মসংস্থানসহ বিয়ে দিতে পেরে আমরা সকলেই আনন্দিত। এটিই হচ্ছে দিন বদলের মত একটি বিষয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন কোন শিশুকে যেন অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাতে না হয়। এই উদ্যোগে এতিম শিশুরা সুস্থ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পাবে বলে আমরা মনে করি। জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদসহ সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন আয়োজন সফল হয়েছে। এমন কাজ করতে পেরে বেশ ভাল লাগছে।