গত ১১ বছরে খুলনায় ১৪ হাজারেরও বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে
খুলনায় প্রতি মাসে গড়ে ১১১টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) শালিসী পরিষদ। রবিবার (৮ মার্চ) এই তথ্য নিশ্চিত করেন কেসিসি’র শালিসী পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমুল হক।
তিনি জানান, গত ১১ বছরে খুলনায় ১৪ হাজারেরও বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শতকরা ৬৫% ক্ষেত্রে নারীরাই বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন।
মো. আজমুল হক বলেন, “সমাজে তালাকের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব, নারীদের মধ্যে পরনির্ভরশীলতা কমে যাওয়া, নারীদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি, মোবাইল ও ফেসবুকের অপব্যবহার, বেকারত্ব ও যৌতুক। তাই এটি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।”
কেসিসি আইন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মোট ১,৭০৬টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০১টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কেসিসির হিসাব মতে, প্রতিমাসে গড়ে ১১১টি বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। এসবের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। এসব নারীদের বয়স ২৫-৪০ বছরের মধ্যে।
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, গত ১১ বছরে এ কর্পোরেশন এলাকায় ১৪ হাজার ৭০৪টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৯৩২টি; ২০১০ সালে ৯৩৩টি; ২০১১ সালে ১,০৭৪টি; ২০১২ সালে ১,১৮১টি; ২০১৩ সালে ১,২৫৪টি; ২০১৪ সালে ১,৪১৯টি; ২০১৫ সালে ১,৪০৪টি; ২০১৬ সালে ১,৪৮৭টি; ২০১৭ সালে ১,৫৯৫টি; ২০১৮ সালে ১,৭১৯টি ও ২০১৯ সালে ১৭০৬টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
এ প্রসঙ্গে নারী নেত্রী ও ভাষাসৈনিক বেগম মাজেদা আলী বলেন, “নারীদের সচেতনা বাড়ছে। আগে নির্যাতিত হলেও নারীরা মুখ বুঝে সহ্য করতো। এখন প্রতিবাদ করে। নারীরা এখন রোজগার করে। স্বামীর ওপর নারীর নির্ভরশীলতা কমেছে। এসব কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। তবে, এর প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর। তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে। তারা অস্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন খুলনার সম্পাদক এড. কুদরৎ-ই-খুদা বলেন, “ফেসবুকের অপব্যবহার ও পাবিবারিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। এ থেকে রক্ষা পেতে যৌতুক আইনের সংস্কার জরুরি। তালাক দেয়ার ক্ষমতা রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে আদালতে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।”