জনসংখ্যা তরুণ বেকার

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৫৪% তরুণেরই কোনো রোল মডেল নেই

দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আর কর্মক্ষম অর্থাৎ ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা কর্মহীন (১৫ বছরের কম ও ৬০ বছরের বেশি) মানুষের তুলনায় বেশি। যাদের বেশিরভাগই আবার তরুণ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।

তবে সামগ্রিকভাবে দেশের তরুণরা কী চান, তাদের সার্বিক অবস্থা কী এসব নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গর্ভানেন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে দেশব্যাপী পরিচালনা করে “দ্য ইয়ুথ সার্ভে ২০১৮” নামে একটি জরিপ।

এই জরিপে উঠে এসেছে তরুণদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়।

দেশের পাঁচটি অঞ্চল নির্দিষ্ট করে প্রত্যেক অঞ্চলের ৩০টি করে উপজেলায় চালানো হয়েছে এই জরিপ। প্রত্যেক উপজেলার একটি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড এবং একটি গ্রাম থেকে ১৪ জন তরুণের সঙ্গে কথা বলা হয় (৭ জন করে নারী ও পুরুষ) জরিপের বিষয়বস্তু সম্পর্কে। সারাদেশ থেকে জরিপে অংশ নেন মোট ৪,২০০ জন তরুণ।

তরুণদের কাছে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের আত্ম-পরিচয় ও জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে। এরপরে একে একে কথা বলা হয়েছে তাদের শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতা, উপার্জনমূলক কাজে অংশগ্রহণ, পছন্দের স্বাধীনতা নিয়ে। পরিশেষে জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে।

দেখা গেছে, জাতীয়তা ও ধর্মের ভিত্তিতেই বেশিরভাগ তরুণ নিজেদের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে নারী, অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত এবং দরিদ্ররা ধর্মীয় পরিচয়কেই প্রাধান্য দেন।

তরুণদের রোল মডেল কারা?

মানুষের জীবনে রোল মডেলের ভূমিকা পরোক্ষভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণ বয়সের রোল মডেলের প্রভাবে বদলে যেতে পারে উপলব্ধির ধরণ, অনুপ্রাণিত করতে পারে যে কোনো কাজে, ঘুরিয়ে দিতে পারে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের মোড়। সর্বোপরি বলা যেতে পারে, একজন রোল মডেল মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে আত্মপরিচয় তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

জরিপে বাংলাদেশের তরুণদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের রোল মডেল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৪% জানিয়েছেন, তাদের কোনো রোল মডেল নেই। বাকি ৪৬% রোল মডেল থাকার কথা জানিয়েছেন।

পুরুষদের তুলনায় ১৩% বেশি নারী জানিয়েছেন তাদের কোনো রোল মডেল নেই। আর শহরের তুলনায় গ্রামের তরুণদের মধ্যে রোল মডেল না থাকার সংখ্যা বেশি। অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিতদের (৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত) ৭০%-ই জানিয়েছেন, তাদের কোনো রোল মডেল নেই। এইচএসসি-র বেশি পড়াশোনা করা তরুণদের মধ্যে যার পরিমাণ ৩২%।

রোল মডেল রয়েছে এমন তরুণদের ৩১% রাজনৈতিক নেতাদেরকে রোল মডেল মনে করেন। এছাড়া, ২৪% তরুণ বুদ্ধিজীবীদের (যেমন- লেখক, কবি, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী), ১৭% আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধব এবং খুব কম সংখ্যক ধর্মীয় নেতাদেরকে রোল মডেল বলে মনে করেন।

লিঙ্গভেদে রোল মডেল

জরিপে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে রোল মডেল পছন্দে তারতম্য দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারীদের তুলনায় ১০% বেশি পুরুষ রাজনৈতিক নেতা ও বিনোদন জগতের মানুষকে রোল মডেল হিসেবে বেছে নেন। আর পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক নারী লেখক বা বিজ্ঞানীদের মতো বুদ্ধিজীবীদেরকে রোল মডেল মনে করেন।

শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক দিক বিবেচনায় রোল মডেল: জরিপে আরও দেখা গেছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তরুণরা রোল মডেল হিসেবে রাজনীতিবীদদের তুলনায় বুদ্ধিজীবীদেরকে বেশি পছন্দ করতে শুরু করেন। আবার শিক্ষিত ও অপেক্ষাকৃত ধনীদের তুলনায় স্বল্পশিক্ষিত ও আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া তরুণরা ধর্মীয় নেতাদেরকে রোল মডেল মনে করেন। এদিকে, ধনী ও উচ্চশিক্ষিতরা বন্ধু কিংবা স্বজনদের মধ্য থেকেই রোল মডেল বেছে নিতে পছন্দ করেন।

অর্থাৎ, এসব তরুণরা রোল মডেল হিসেবে ঘনিষ্ঠ কাউকে চান যিনি তাকে সরাসরি উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। তাদের আরেকটি অংশ আবার বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে চান।