দর্পণ ডেস্ক : প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার দীর্ঘদিনের সংকট সমাধানে ওই দুই দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে সৌদি আরব এবং কাতারে সফর করবেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ উপদেষ্টা জেরার্ড কুশনার এবং তার একটি টিম। খবর আলজাজিরার।
রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সৌদির নিওম শহরে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন কুশনার। এর পরে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সে দেশে গিয়ে দেখা করবেন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির অ্যাক্সিওস ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে সৌদি আরব এবং কাতারের মধ্যে যেসব ইস্যু নিয়ে বিরোধ চলছে সেসব বিষয়ে সমাধান করে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সৌদি আরব এবং কাতারের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন কুশনার। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই সঙ্কটের সমাধান চান তিনি।
সন্ত্রাসবাদে সমর্থন ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার অভিযোগে ২০১৭ সালে কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর। যদিও সব ধরনের অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে দোহা। দেশটির অভিযোগ তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার চেষ্টা করছে এসব দেশ। সেসময় কাতারের সঙ্গে স্থল, জল ও আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে দেশটির ওপর ১৩টি শর্ত বেধে দেয় চার আরব দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রিয়েন চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন যে, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সংকট সমাধানকেই প্রশাসন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগেই হয়তো এই সমাধান চলে আসতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত মাসে সৌদির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিন বছরের এই সংকট সমাধানের চেষ্টায় বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, রিয়াদ একটি সমাধান খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছিলেন, ‘কাতারি ভাইদের সঙ্গে আমরা আবারও মিলিত হতে চাই। আমরা আশা করব তারাও সেটাই চাইবে।’ তিনি বলেন, কাতারের ওপর যে অবরোধ আরোপ করা হয়েছে তা শেষ করতে সৌদি একটি উপযুক্ত উপায় খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে এটি শর্তাধীন থেকে যাচ্ছে।
গত মাসেও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পথ খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রিন্স ফয়সাল। তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাতারি ভাইদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাই।
এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সংকট তৈরি করে কেউ জয়ী হতে পারবে না। তিনি বলেন, তার দেশ আশা করছে যে কোনো সময় এই অবস্থার সমাপ্তি ঘটবে।
এই সফরে কুশনারের সঙ্গে যোগ দেবেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত অ্যাভি বারকোয়িতজ এবং ব্রায়ান হুক। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডাম বোয়েহলারও তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
গত আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইন, আরব আমিরাত এবং সুদানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা করেছেন কুশনার এবং তার টিম। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এমন আরও কিছু চুক্তির ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফলাফল দেখতে চান তারা। সে কারণেই এসব দেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাম্পের জামাতা।