দর্পণ ডেস্ক : সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক আসছে লাশবাহী এম্বুলেন্স। আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ৩৭ জনের মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে আনা হয়। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৫ জন কর্মীও রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনকে শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন- কুমিরা ফায়ার স্টেশনের নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত বাঁশাখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের মনিরুজ্জামান (৩২), একই উপজেলার চারিয়ার নাপুরা এলাকার মাহমুদুর রহমানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬) ও রবিউল আলম (১৯)। তাদের মধ্যে মহিউদ্দীন বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ফায়ার সার্ভিসের দগ্ধ ও আহত ১৫ জন কর্মীকে চট্টগ্রাম সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আরো দুজন কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান।
এদিকে স্বজনহারাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চমেক হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশ। হাসপাতালের বেডে কাতরাছেন আহতরা।
ওদিকে শনিবার রাত ১০টায় লাগা আগুন দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জ্বলছে একের এক কন্টেইনার। আগুন নিয়ন্ত্রণে ডাকা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। ফায়ার সার্ভিস ও র‌্যাব পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা যোগ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পরই ডিপোতে থাকা আমদানি ও রফতানির বিভিন্ন মালামালবাহী কনটেইনারে আগুন ধরে যায়। এই বিস্ফোরণে শব্দে আশেপাশের চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে উঠে। আশপাশের অধিকাংশ বিল্ডিয়ের কাঁচের গ্লাস ভেঙে যায়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাচক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান রোববার সকালে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হলেও বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ডিপোতে রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। রাসায়নিকের কারণে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে।
এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৫ কর্মীসহ ৩৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত তিন শতাধিক। ডিপোতে থাকা রাসায়নিক পদার্থবাহী কনটেইনার থেকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ২৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মূলত পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে। এখান থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য কনটেইনারগুলো প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। ৩৮ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনার সময় সেখানে ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অন্তত ২০০ শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে সেখানে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ তখন ছিলেন তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।