লায়ন শামীম আহমেদ,ভৈরব প্রতিনিধি : ১৯৭১ সালে আজকের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ভৈরবকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করে। ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও বন্দরনগরী ভৈরব তখনো হানাদার মুক্ত হয়নি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরো তিন দিন। ১৯৭১ সালে ১৪ এপ্রিল ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লারচর নামক স্থানে ব্রম্মপুত্র নদের তীরে খেয়াপারে অপেক্ষামান নিরস্ত্র অসহায় পাঁচ শতাধিক সাধারণ মানুষকে ব্রাস ফায়ার করে হত্যা মধ্যে দিয়ে ভৈরবের দখল নেয় পাকহানাদার বাহিনী। ওই স্থানে পরে নিহত লোকজনের গণ কবর দেয় আশে-পাশের মানুষ। পানাউল্লারচর বর্তমানে ভৈরবের “বধ্যভূমি” হিসেবে সংরক্ষিত। নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষররা কৌশলগত কারণে ভৈরবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯মাস। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তি বাহিনীর কাছে পরাজিত পিছু হঠতে থাকে সেই সময় ভৈরব ছিলো পাকিস্তানী বাহিনীর শক্তঘাঁটি। এদিকে যৌথ বাহিনী ভৈরবকে মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যৌথ বাহিনী এখানকার যুদ্ধে কোনো লোকের খিয়াল না করে, আগে রাজধানী ঢাকা শহরকে মুক্ত করার কৌশলগত ভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে অগ্রসর হতে থাকে। ভৈরব শহরের পাশ কাঁটিয়ে পাশের এলাকা দিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায় তারা। তাই ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলে ভৈরব শহর পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা অবরোদ্ধই থেকে যায়। স্থানীয় জব্বার জুট মিলে আশ্রয় নেয়। প্রায় ১০ হাজার পাক বাহিনীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-সস্ত্রসহ চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী। ১৮ই ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী পুরো ভৈরব ঘেরাও করে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পনের আহ্বান জানায়। পরে ১৯ ডিসেম্বর সকালে ভৈরব রেলষ্টেশনে মিত্র বাহিনীর মেজর মেহতা ও পাক বাহিনীর কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার মোঃ সায়দুল্লাহর সাথে আলোচনা করে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করে। সেই সাথে মুক্ত হয় শহীদ আতিক,নুরু,ক্যাডেট খোরশেদ আলম,আলকাছ মিয়া,আশরঞ্জন দে সহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত ভৈরব। স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারীদের স্মরণে ভৈরব শহরের ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড গোল চত্বরে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য “দুর্জয় ভৈরব”।