সাইফুল্লাহ নাসির, বরগুনা প্রতিনিধিঃ নাড়ীর টানে পরিবার পরিজনের কাছে আসা মানুষ ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে।ঈদের ষষ্ট দিন সোমবার আমতলী লঞ্চঘাট থেকে এমভি সুন্দরবন-৬ লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চারগুন যাত্রী নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঢাকার উদ্দেশ্যে  বেলা ১১.৫০ টায় ছেড়ে গেছে।এ রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া লঞ্চের যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অগ্রিম সিট কিনতে হচ্ছে।বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আমতলী লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশী ভাড়া আদায় করার ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।লঞ্চের ষ্টাফ ও আনসাররা ডেকে বিছানা বিছিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সিট প্রতি অতিরিক্ত ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছে।
জানা গেছে,আমতলী-ঢাকা রুটে এমভি হাসান হোসেন,এমভি ইয়াদ ও এমভি সুন্দরবন-৬ নামের তিন খানা লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে।ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত কোন লঞ্চ দেয়নি মালিকপক্ষ। এ লঞ্চের মালিকরা বিআইডব্লিউটিএ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চার থেকে ছয়গুন বেশী যাত্রী  যাত্রী পরিবহন করছে।এমভি ইয়াদ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৯৬ জন,নেয়া হচ্ছে এক হাজার দু’শত থেকে এক হাজার পাচ’শ জন।প্রিন্স অব হাসান-হোসেন-১ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৪২ জন,নেয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে দু’হাজার জন।এমভি সুন্দরবন-৬ লঞ্চে যাত্রী ধারন ক্ষমতা ৬০৩ জন,নেয়া হচ্ছে এক হাজার পাচ’শ থেকে এক হাজার আট’শ জন।
এছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।পূর্বে আমতলী-ঢাকা প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের ভাড়া ছিল এক হাজার টাকা এবং ডেকের যাত্রীদের ভাড়া ছিল ৩’শ টাকা।ঈদের আটদিন পূর্বে কোন কারন ছাড়াই এ ভাড়া বৃদ্ধি করে সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০ টাকা,ডাবল কেবিন দুই হাজার ৪০০ টাকা এবং ডেকের ভাড়া তিনশত ৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে।লঞ্চের ষ্টাফ ও আনসাররা ডেকে বিছানা বিছিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সিট প্রতি অতিরিক্ত ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছে।সোমবার লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্র বোঝাই,ভাড়া বেশী আদায় ও অতিরিক্ত টাকায় সিট বিক্রির খবর পেয়ে আমতলী সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার ও ওসি মোঃ আলাউদ্দিন মিলন আমতলী লঞ্চঘাট পরিদর্শন করেন।ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই দেখে দ্রুত লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশে বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটের সময় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে সুন্দরবন-৬ লঞ্চটি ছেড়ে যায়।
সোমবার আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে,এমভি সুন্দরবন-৬ লঞ্চ ধারন ক্ষমতার চেয়ে চারগুন যাত্রী বহন করে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চঘাট ছেড়ে গেছে।এ লঞ্চটিতে তিল পরিমান জায়গা ছিলনা।মানুষ ডেকে জায়গা না পেয়ে লঞ্চের ছাদে অবস্থান নিয়েছে।যাত্রীরা লঞ্চের তৃতীয় তলায় মেশিনের সাইলেন্সসার পাইপের কাছে আসন পেতে বসেছে।অনেক যাত্রীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।লঞ্চের ষ্টাফ ও আনসার সদস্যরা ডেকে বিছানা বিছিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সিট প্রতি অতিরিক্ত ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছে।

তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া গ্রামের মোঃ সুমন বলেন,অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই সুন্দর বন-৬ লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, লঞ্চের মিরাজ নামক এক ষ্টাফের কাছ থেকে একটি সিট ২০০ টাকায় ক্রয় করেছি।
 তালতলীর গাববাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেন সাগরকন্যাকে বলেন, এক আনসার সদস্যের কাছ থেকে ছাদের ৫ টি সিট ১৫০ টাকা করে ৭৫০ টাকায় নিয়েছি।তিনি আরো বলেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। কি হয় আল্লায় জানে।আমতলীর মহিষডাঙ্গা গ্রামের তাহমিনা বেগম বলেন,লঞ্চের ডেকে কোন সিট পাইনি।তাই ছাদে একটু জায়গা পেয়েছি।বৃষ্টি এলে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।তিনি আরো বলেন,একটি ডেকের সিট ২০০ টাকায় নিয়েছি।

আমতলীর বৈঠাকাটা গ্রামের রায়হান বলেন,লঞ্চের ষ্টাফ মিরাজের কাছ থেকে ডেকের ৫ জনের একটি সিট ১ হাজার টাকা দিয়ে নিয়েছি।
ধানখালী গ্রামের জামাল অভিযোগ করে বলেন,একেতো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, তারপর ভাড়াও বেশী আদায় করছে।সুন্দরবন-৬ লঞ্চের সুপার ভাইজার অপু মিয়া অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া ও বেশী ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন,ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের চাপ বেশী। তাই সময়ের চার ঘন্টা পূর্বে আমতলী ঘাটলঞ্চ থেকে লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছি।
বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী বহনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,ঈদ উপলক্ষে লঞ্চে যাত্রী একটু বেশীই নিচ্ছে।দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চের কোন দূর্ঘটনা ঘটনা এর দায় আপনী নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।তিনি আরো বলেন,লঞ্চের দায়িত্ব শুধু আমার একার নয়,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন,দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের খবর পেয়ে দ্রুত লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।