অনলাইন ডেস্ক : ‘নারীবাদ একটা পশ্চিমা ধারণা। এটা মায়েদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখে।’ নারীবাদ নিয়ে এমন অবস্থান পাকিস্তানের হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। নির্বাচনের আগে গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে তিনি নারীবাদকে ‘পশ্চিমা ধারণা’ অভিহিত করে এর কঠোর সমালোচনা করেন। শুধু নারীবাদ নয়, পাকিস্তানের বহুল বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইনকেও সমর্থন করেন তিনি।

ইমরান খান বলেন, ‘পশ্চিমা ধারার নারীবাদ আন্দোলন নারীদের মাতৃত্বকে খাটো করছে।’ সে সময় তার এ মন্তব্য নারীবিরোধী হিসেবে দেখা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ ইমরান খানকে এক সময় দেখা হতো অক্সফোর্ডে পড়া এক রমণীমোহন প্লেবয় হিসেবে। তিনি ক্রিকেট খেলার অন্ধিসন্ধি যেমন জানতেন, তেমনি চিনতেন লন্ডনের নাইটক্লাবগুলো।

আর এ কারণেই পশ্চিমাবিশ্ব বিশেষ করে ব্রিটেনে তাকে অনেকটা ‘উদারবাদী’ হিসেবে দেখা হয়। গার্ডিয়ানের সাবেক সাংবাদিক জোনাথন বুন লিখেছেন, তার রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই ‘উদার’ হবে। কিন্তু সত্যি কি তাই হবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, তা বোঝা যাবে আগামী কয়েক মাস বা বছরেই। তবে নারীবাদের ব্যাপারে তার যে অবস্থান তা থেকেও আঁচ করা যায়, পাকিস্তানে নারী স্বাধীনতার ডানা ছাঁটবেন তিনি।

নারীবাদ ও ব্লাসফেমি ইস্যুতে জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন ইমরান। নারীশিক্ষা ও তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারকে বাঁকা চোখে দেখে তালেবানরা।

এ জন্য ইতিমধ্যে ‘তালেবান খান’ উপাধি পেয়েছেন তিনি। প্রধানত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সক্রিয় এ গোষ্ঠীটির সঙ্গে প্রায়ই শান্তি আলোচনার কথা বলেন তিনি। এমনকি তালেবানের জনক বলে পরিচিত সামি-উল হকের দলের সঙ্গে জোট করেছেন তিনি।

ইমরান খান মনে করেন, তালেবানরা একটি ‘ধর্মযুদ্ধ’ করছে। ২০১৩ সালে পেশোয়ার শহরে একটি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তালেবানদের অবস্থানকে তিনি ‘বৈধ’ হিসেবেও চিহ্নিত করেন। পরিদর্শনের মাত্র কয়েক দিন আগে এই হাসপাতালটিতেই তালেবানের গুলিতে বিদ্ধ মালালা ইউসুফজাইকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। এমনকি দেশে তালেবানদের রাজনৈতিক অফিস খোলার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন ইমরান।

পাকিস্তানের প্রধান দলগুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ এনে রাজনীতিতে সামনের কাতারে আসেন ইমরান। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা তিনিই করেছিলেন। এ মামলার জেরে পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী আদালত নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করেন। নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলা, সুপ্রিমকোর্টে তার অযোগ্য ঘোষিত হওয়া এবং অবশেষে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।

নির্বাচনে পিটিআইয়ের জয়ের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। ভাষণে জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, নয়া পাকিস্তান উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘মহানবীর অনুপ্রেরণায় মদিনায় যে ধরনের রাষ্ট্র ছিল আমি সেই ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

কিন্তু এখন কথায় কথায় যার মুখে সুন্দর কথার ফুলঝুরি ছুটছে সেই ইমরান খানের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে বিতর্ক। ব্যক্তিজীবন, যৌনতা, স্ত্রীর ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, নিয়মিত মাদক সেবন, চোরাচালান, জোর করে গর্ভপাত করানোর মতো মর্মান্তিক কাজ, এমনকি পাকিস্তানকে কট্টরপন্থীদের হাতে তুলে দেয়া- বিভিন্ন সময়ে এমন সব বিস্ফোরক অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি।