তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, পরিস্থিতি এখনও এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে
দেশে করোনাভাইরাস (কোভিক-১৯) ছড়িয়ে পড়া রোধে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি স্কুল ও কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া দরকার। প্রথম দিকে অন্তত দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখা প্রয়োজন এবং পরে অবস্থা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, শিশুহ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিপুল সংখ্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জমায়েত হন। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে বলছেন।
সম্প্রতি ইতালি থেকে ফেরা দুই বাংলাদেশির শরীরে নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। সেই সাথে তাদের একজনের সংস্পর্শে এসে তৃতীয় আরেকজন এতে আক্রান্ত হন। চীনের উহান থেকে সৃষ্ট এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা লোকজনকে অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রাজধানীতে তিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, পরিস্থিতি এখনও এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে।
ফখরুল অভিযোগ করেন যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন – করোনাভাইরাস: বিএনপির দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত
মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে তিনটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করেছে। কিন্তু এসব হাসপাতাল থেকে অন্য রোগীদের এখনও সরিয়ে নেওয়া হয়নি। ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস একই ধরনের রোগ নয়। হাসপাতালে যদি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী থাকেন তাহলে অন্য রোগীরাও এতে আক্রান্ত হবেন।”
বিএনপি নেতা বলেন, সরকারের উচিত নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোতে শুধুমাত্র করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। আর আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“আমরা যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সাম্ভব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনও ক্ষমা করবে না। কারণ জনগণ ১৯৭৪ সালের মতো আরেকবার গণমৃত্যুর শিকার হতে চায় না,” যোগ করেন ফখরুল।
তিনি বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের এবং দেশবাসীকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান ও এ রোগ যাতে আর না ছড়ায় সে লক্ষ্যে জনসচেতনামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানান। “দুস্থ রোগীদের সুচিকিৎসায় সহায়তা দান এবং রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সরঞ্জাম নিয়ে জনগণের পাশে থাকার জন্যও আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্যান্যের মাঝে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।