ঘুম হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কাজের মাঝে বিশ্রামের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, ফলে ঘুম কমে যাওয়ায় মানুষের শরীরে অনেক ধরনের প্রভাব পড়ে
ঘুম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘুম হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বন্ধ থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় প্রাণীর মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের জীবনে আনে প্রশান্তি, মন রাখে প্রফুল্ল, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে বহুগুন। তবে বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুম কমে গিয়েছে অনেকেরই। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কাজ। ফলে ঘুমের সময় ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলেই বাড়ছে বিভিন্ন রোগ।
তবে চলুন জেনে নেয়া যাক নিয়মিত কম ঘুমানোর জন্য যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ
চিন্তাশক্তি হ্রাস
প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুম আমাদের কর্মক্ষমতা, সামাজিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সূত্রপাত ঘটায়। ঘুমের স্বল্পতা আমাদের সারাদিনের ক্লান্তিভাব, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ নিয়ন্ত্রণে ও অহেতুক উদ্বেগের জন্য দায়ী।
মনোযোগের অভাব ও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি
কম ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তিতে দুইভাবে প্রভাব ফেলে। প্রথমত, যেকোনো বিষয়ে আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা কমিয়ে ও শিখন পদ্ধতিকে ধীর করে দিয়ে। দ্বিতীয়ত, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে স্মৃতি একীভূতকরণে। তাই কম ঘুমের ফলাফল হয় বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি যা ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে করে তোলে ভুলোমনের অধিকারী।
চেহারায় বয়স্ক ভাব ও ত্বকের সাবলীল সৌন্দর্য নষ্ট
ধারাবাহিকভাবে ঘুমের অভাব হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। কারণ ঘুমের সময় শরীর তার মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষের সংস্থাপন করে, তাদের পুষ্টির জোগান দেয়। সঠিক পরিমাণ ঘুম শরীরের ৬০% ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়াও কম ঘুম শরীরে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণও কমিয়ে দেয় ও শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে।
ওজন বাড়িয়ে দেয়
বেশি ঘুমোলে ওজন বাড়ে, তা সবার জানা। তাই অনেকেরই ধারণা যে কম ঘুমালে নিশ্চয়ই ওজন কমে? কিন্তু সঠিক উত্তর ঠিক এর উল্টো। ঘুমের অভাব আমাদের ক্ষুধার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ও আকর্ষণ বাড়ায় হাই ফ্যাট খাবারের প্রতি। গবেষণা মতে, যারা দিনে ছয় ঘণ্টা বা তার কম ঘুমায় তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা যারা দিনে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমায় তাদের থেকে ৩০% বেশি।
যৌন ইচ্ছা ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম ঘুমের ফলে শরীরে সেক্স হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকে। শুধু তাই নয়, কমে যায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হরমোন। এটি কমিয়ে দেয় যৌন চাহিদাকে।
এছাড়া একটানা ঘুমের অভাব দেহে হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনিয়মিত ঘুম পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ কমায়, যা প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। আর নারীদেহে ঘুমের অপ্রতুলতা শরীরের জৈবিক ছন্দ ব্যাহত করে, হরমোন ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায় ও যৌনতাড়না কমায়।
ডিপ্রেশনের কারণ
অপর্যাপ্ত ঘুম বা ঘুমের কোন সমস্যা ডিপ্রেশনের একটি আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় উঠে এসেছে যে বেশিরভাগ হতাশাগ্রস্থ মানুষ ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায়। না ঘুমানো বা কম ঘুমানো ডিপ্রেশনকে যেমন পাকাপোক্ত করে, ঠিক তেমনি ডিপ্রেশনও ‘ইনসমনিয়ার’ একটি অন্যতম কারণ।
হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
স্বল্প ঘুমের অর্থ হচ্ছে শরীর তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে না। বিশ্রামহীন শরীরকে দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম রাখতে বিশেষ কিছু রাসায়নিকের নিঃসরণ হয় যার ফলে সাময়িকভাবে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার কমে যায়, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ বেড়ে যায় যা কিনা ডায়াবেটিস ও হার্টের বিভিন্ন রোগের কারণ।
ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়
অপর্যাপ্ত ঘুম ও ক্যান্সারের মধ্যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সাথে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও আরোগ্যলাভে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ঘুমের সময় শরীরে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা কোষক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।