অনলাইন ডেস্ক : ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসা থেকে সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা ও সোনালি ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার অডিট কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।
নিহত ওই কলেজ শিক্ষিকার নাম সাজিয়া বেগম। তিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি দুই ছেলে নিয়ে এই ফ্লাটের পাশের ফ্লাটে থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সুত্রাপুর থানার বানিয়া নগর। ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ফারুক হাসান। তার বাড়িও রাজধানীর আগারগাও এলাকায়।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি এফএম নাসিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দিলে আমরা এসে লাশ উদ্ধার করি। দক্ষিন ঝিলটুলি এলাকার নুর ইসলাম এর দ্বিতল বাড়ির নিচতলার একটি ফ্লাট থেকে লাশ দুইটি উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকায় একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় ব্যাংকার ফারুক হাসানের ফ্ল্যাট থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সাজিয়া ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি ২৯তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে চাকরিতে যোগ দেন। আর ফারুক হাসান সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর শহর শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারা একই ভবনে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ফরিদপুর জেলা পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি আতিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকৃত পুরুষের লাশটি ছিল ঝুলন্ত অবস্থায়। আর নারীর রক্তাক্ত মরদেহ মেঝেতে পড়ে ছিল। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি হত্যাকাণ্ড নাকি অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি-মালিকের ছেলে ওই ফ্ল্যাটের মূল দরজা খোলা পান। তিনি উঁকি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় একজনের মরদেহ দেখে চিৎকার দেন। এরপর লোকজন জড়ো হয় এবং খবর দিলে পুলিশ এসে দুটি লাশ উদ্ধার করে।
বাড়ির মালিকের ছেলে ডেবিড বলেন, আজ রাজেন্দ্র কলেজের অভিষেক অনুষ্ঠানের কনসার্ট ছিল। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কনসার্ট শেষে বাড়ি ফিরে নিচতলার ওই ফ্লাটের দরজা খোলা দেখতে পাই। দরজার ফাকা দিয়ে দেখতে পাই ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ঝুলছে। আমি সাথে সাথেই পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে লাশ উদ্বার করে।
ডেবিড আরো জানান, নিহত কলেজ শিক্ষিকা ১ বছর আগে এই বাসা ভাড়া নেন। আর ব্যাংক কর্মকর্তা ১ মাস আগে ভাড়া নেন। ১ মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও তিনি থাকতেন না। দুই দিন আগে তিনি বাসায় এসে উঠেছেন।
সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ বলেন, ম্যাডাম আজ কলেজে গিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি কলেজ থেকে বাড়ির জন্য বের হয়ে যান। এর পর রাতে জানতে পারলাম ম্যাডামকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরে না পেয়ে থানায় যাই। ঠিক তখনই বাড়ির মালিকের ছেলে থানায় গিয়ে পাশের ফ্লাটে লাশ ঝুলে থাকার খবর দেয়। সেই লাশ উদ্ধার করতে এসে পুলিশ ম্যাডামের লাশও উদ্ধার করে। খবর পেয়ে আমরা শিক্ষকবৃন্দ ঘটনাস্থলে আসি।
নিহত কলেজ শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, চারটার দিকে স্ত্রীর সাথে শেষ কথা হয়। তখন সে জানায় বাসায় আসছে। এরপর রাত হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজির শুরু করি, তার কলিগদের জানাই। কোথায় খুজে না পেয়ে থানায় জানাই।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এ এফ এম নাসিম বলেন, বাড়ির যে ফ্ল্যাটে সাজিয়া থাকতেন তার পাশের ফ্ল্যাটেই ভাড়া থাকতেন ফারুক। ওপরের তলায় বাড়ির মালিক থাকেন।
ওসি বলেন, সাজিয়ার মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ছিল। মনে হয়েছে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করা হয়েছে। তার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। মাঝেমধ্যে তিনি ফরিদপুরে আসতেন। তবে ফারুকের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তিনি বিবাহিত কি-না তাও জানা যায়নি। ওই নারীকে হত্যার পর তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলেও পুলিশ ধারণা করছে।
ওসি আরও জানান, দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও থাকতে পারে। তবে সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে দু’জনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হচ্ছে। তাদের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে।