মা-ছেলে প্রায়ই একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান
১৯৯৮ সালে সোনাগাজীর বেলায়েত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন হুরে জান্নাত। ওই বছরই পরিবারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী নূর হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। এরপর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও নানা কারণে তা এগিয়ে নিতে পারেননি। এরমধ্যে হুরে জান্নাতের কোল আলো করে আসে দুই ছেলে আবদুল্লাহ আহসান ও আবদুর রহমান।
কিন্তু একটা সময় তার মনে হলো পড়ালেখা করা উচিত ছিল। ধীরে ধীরে মনের ভেতর একটা ইচ্ছা শক্তি তৈরি হতে থাকলো। সে শক্তি কাজে লাগিয়ে এক যুগ পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর আকাঙ্ক্ষা আরও বেড়ে যায়। স্বপ্ন দেখেন উচ্চ শিক্ষার।
চারবছর পর ২০১৬ সালে ভর্তি হন ফেনী ইউনিভার্সিটি’র আইন বিভাগে। ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শেষ বর্ষে আছেন হুরে জান্নাত।
নিজের সন্তানদের বয়সী সহপাঠীদের সাথে চার বছর পড়াশুনা অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে হুরে জান্নাত বলেন, “এখানে আমার বেশ কিছু ভালো ফ্রেন্ড ছিল। তাদের মধ্যে নাজমুল হক, আরাফাত বিন আনোয়ার, জান্নাতুন নাঈম নিশা অন্যতম। তাদের সঙ্গে জীবনের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছি। কখনো অস্বস্তি বোধ করিনি। তারা আমার ছোট সেটা মনে হয়নি বরং সবার কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন হুরে জান্নাতের প্রথম সন্তান। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মায়ের পছন্দে ফেনী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। বাণিজ্য অনুষদের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
মা-ছেলের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত বিরল। কিন্তু কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন তারা? মা হুরে জান্নাত বলেন, “আমার বাসা ফেনী শহরেই। আবদুল্লাহ ঢাকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু আমি ছেলেকে বলেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ালিটির কথা। কারণ আমি গেলো কয়েক বছরে দেখেছি এখানে শিক্ষার মান খুবই ভালো। এছাড়া এখানকার পড়ালেখার পরিবেশ একদম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তাই ছেলেও দ্বিমত করেনি।”
জান্নাত বলেন, “আমরা মা-ছেলে প্রায়ই একসাথে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা করি। এ নিয়ে আমার মধ্যে কখনো অস্বস্তি লাগে না। বরং আমার কাছে স্বস্তির বিষয় হলো যে, আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। চোখে চোখে রাখতে পারছি। সে যেন ঠিকভাবে নিজের পড়ালেখা শেষ করতে পারে সেই দোয়া করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে দেখা যায় অনেক ছেলে নষ্ট যায়। কিন্তু আমার ছেলের এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।”
আবদুল্লাহ আহসান বলেন, “মায়ের পড়ার প্রতি আন্তরিকতা মুগ্ধ করে আমাদের। অনুপ্রাণিত হই প্রতিনিয়ত। আম্মু সব সময় আমাদের দিকে খেয়াল রাখেন। এত বড় হয়েছি তারপরও মায়ের কেয়ার এতটুকু কমেনি। ফেনী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে আম্মুই অনুপ্রাণিত করেছেন। এখানে ভর্তি হয়ে আমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।”