সারাহ

আপনার মায়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সাথে যদি কোনদিন দেখা হয় তাদের আপনি কী বলবেন? আপনি কি তাদের ক্ষমা করতে পারবেন?

এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কিশোরী, ১৭ বছর বয়সী সারাহ সালসাবিলাকে।

জাকার্তায় অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের পাশের সড়ক দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন আইওয়ান সেতিওয়ান। মাথায় স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা।

স্ত্রীর হাত তার বুকের উপর ঝুলছে। পিঠের দিকে গর্ভবতী স্ত্রীর ফুলে থাকা পেটের চাপ অনুভব করছিলেন তিনি। সংসারে দ্বিতীয় সন্তান আগমনের অপেক্ষায় তারা দুজন।

স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত পরীক্ষার জন্য। একটু পরেই যা ঘটলো তা তার জীবনকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল।

“হঠাৎ ভয়াবহ বিকট শব্দ আর আমরা আকাশের দিকে ছিটকে চলে যাচ্ছি,” বলছিলেন আইওয়ান।

তিনি তখনো জানেন না তিনি একটি আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়েছেন।

হামলা চালিয়েছিল আলা-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত জেমাহ ইসলামিয়া নামে একটি ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী।

খালেদা জিয়ার মুক্তির চেষ্টায় বিএনপি কেন নাজুক অবস্থানে

ইদলিবকে কেন্দ্র করে কি সিরিয়া-তুরস্ক যুদ্ধ বেধে যাবে?

হাঁটা দিবস আছে, কিন্তু নির্বিঘ্নে হাঁটার উপায় কোথায়?

২০০২ সালের দিকে ইন্দোনেশিয়ায় তাদের সিরিজ হামলায় বিশ্বের নানা দেশের ২০২ জন নিহত হয়েছেন।

সেতিওয়ান সেই মুহুর্তকে স্মরণ করে বলছিলেন, “আমি শুধু দেখলাম রক্ত, অনেক রক্ত। এক ধরনের ধাতব কিছু উড়ে এসে আমার চোখে ঢুকে গেল।”

তার স্ত্রী মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে অনেক দুরে পরে আছেন। দুজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।

আহত, হতভম্ব হালিলা সেরোজা দাউলের ঠিক তখনি প্রসব বেদনা উঠলো।

“তাকে তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া হল অস্ত্রোপচার কক্ষে। থেমে থেমে ব্যথা উঠছিল। আল্লাহর অশেষ দয়ায় যেকোনভাবেই হোক স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই সে সন্তান জন্ম দিয়েছিল।”

সেই রাতে জন্ম হয়েছিল রিজকি নামের এক পুত্র সন্তানের। রিজকি অর্থ “আশীর্বাদ”।

এই দম্পতির প্রথম সন্তান সারাহ বলছিলেন, “আমার মায়ের খুব শক্ত মনোবল ছিল। তার হাড় ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও স্বাভাবিকভাবে আমার ভাইকে জন্ম দিয়েছিল। অবিশ্বাস্যরকম শক্ত ছিল সে।” এই কথাগুলো বলতে গিয়ে সারার গাল বেয়ে অশ্রু নেমে এলো।

তবে হালিলা কোনদিন পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। দুই বছর পর মেয়ে সারার পঞ্চম জন্মদিনে মারা যান তিনি।

চোখের জ্বল ফেলে আইওয়ান বলছেন, “আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, আমার আত্মার সাথীকে সেদিন হারিয়েছি। তাকে নিয়ে কথা বলা খুবই কষ্টকর।”

শুরুতে প্রতিশোধের উন্মত্ত অনুভূতিতে ভরে গিয়েছিল তার মন।

“হামলাকারীদের মধ্যে যে বেঁচে গেছে, আমি তার মৃত্যু কামনা করেছিলাম। আমি তাদের দ্রুত মৃত্যু নয়, শুরুতে ধীরে ধীরে নির্যাতনে মৃত্যু চেয়েছিলাম।

আমি চেয়েছিলাম প্রথমে তাদের শরীরের ত্বক কেটে সেই ক্ষতে লবণ মিশিয়ে দিতে। এই হামলা আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে যে কষ্ট আমাকে দিয়েছে সেটি যেন ওরা অনুভব করতে পারে। বেচে থাকতে আমার ও আমার সন্তানদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।”

২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে সেই বোমা হামলার ১৫ বছর পর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস, হালিলা’র মৃত্যুর তের বছর। রিজকি এখন জুনিয়র হাই স্কুলে পরে আর সারাহ’র স্কুল জীবন প্রায় শেষ হয়ে এলো।

বাবার সাথে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নদী ধরে নৌকায় করে তারা যাচ্ছিল নাসুকামবাঙ্গান দ্বীপে।

জাভা উপকুলে এখানেই অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সবচাইতে কঠোর নিরাপত্তা সম্বলিত কারাগার।

আমরা যাচ্ছি সেখানে অপেক্ষমাণ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই কারাবন্দীর সাথে দেখা করতে। তাদের হামলাতেই মা হারিয়েছে শিশুরা, আইওয়ান হারিয়েছেন তার স্ত্রীকে।

“আমার বুক ধুকধুক করছে। আমি খুব আবেগপ্রবণ বোধ করছি। আমার মাথায় কী কাজ করছে তা ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না।”

“আমি আশা করি অন্তত এই যাত্রা বোমারুদের মন বদলাতে সাহায্য করবে।”

হামলাকারীদের একজনের সাথে আইওয়ানের আগে একবার দেখা হয়েছিল। জঙ্গিদের উগ্রতার পথ থেকে ফেরাতে ইন্দোনেশিয়ার সরকারের এক বিশেষ উদ্যোগে সেটি সম্ভব হয়েছিল।

তবে তার সন্তানদের জন্য এটি হবে মায়ের হত্যাকারীদের সাথে প্রথম সাক্ষাত।

আমি আইওয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম সে কী এটি করতে চায় কিনা। এখানে আসার আগে আরও বহুবার এই প্রশ্ন আমি তাকে করেছি। তার জোরালো উত্তর, “হ্যাঁ এটা আমার সন্তানদের জন্য দরকার।”

“আমি তাদের শিখিয়েছি মনের মধ্যে রাগ পুষে না রাখতে। তারা জানতে চায় ওরা কেমন ধরনের মানুষ।”

১৭ বছর বয়সী সারা অন্য আরও কিশোরীর মতো। হাতে তার মোবাইল ফোন যেন আঠার দিয়ে লাগানো।

মাথায় কালো স্কার্ফ, পরনে ডোরাকাটা শার্ট আর লম্বা ট্রাউজার। যাত্রাপথে পুরোটা সময় সে সেলফি তুলছিল। কিন্তু কেন সে ওই কারাগারে যাচ্ছে সেটা বলতে গিয়ে তার চোখে অশ্রুবিন্দু জমে উঠছিল।

তার ভাষায়, “আমি আশা করি আমাদের সাক্ষাত সন্ত্রাসীদের আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে সাহায্য করবে। তারা যদি সত্যিকার অর্থে পাপবোধ অনুভব করে তাহলে অন্যদের তা প্রভাবিত করতে পারবে এবং এমন ঘটনার আর ঘটবে না।”

সারাহ একটি কঠিন প্রশ্ন করলো। যে প্রশ্ন তার মনে রয়েছে বহু বছর ধরে।

“ওরা কেন এমনটা করলো? আমি শুধু এটাই জানতে চাই।”

ওদিকে কারাবন্দীদের হলুদ রঙের পোশাক পরে কারাগারে অপেক্ষা করছেন আইওয়ান ধর্মাবান মুনতো।

রইস নামে যিনি বেশি পরিচিত। হুইলচেয়ারে বসা লোকটিকে জীর্ণ ও দুর্বল দেখাচ্ছে। সম্প্রতি তার একবার স্ট্রোক হয়েছে। তার হাত ও পায়ে তবুও হ্যান্ডকাফ লাগানো।

যেদিন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়েছিল সেদিন সে হাত মুঠো করে জোরে জোরে বলেছিল, “আমি খুশি যে আমার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে…….কারণ আমার শহীদের মর্যাদা নিয়ে মৃত্যু হবে।”

ধারণা করা হয় ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোটে অংশীদার হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে হামলা করা হয়েছিল।

রইসের দুইপাশে অস্ত্রধারী দুই প্রহরী। তারা আমাদের বলল যদি সে কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে যেন আমরা দ্রুত দেয়ালের দিকে চলে যাই।

তার সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলো দুই মেয়ে ও তাদের বাবা। নীরব আবহ ঘরের মধ্যে। প্রথমে সেই নীরবতা ভাঙলেন আইওয়ান।

“মায়ের হত্যাকারী এবং তাদের বাবার চোখ হারানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দেখার জন্য আমার সন্তানেরা কৌতূহলী।”

খুব সহজভাবে রইস তাকে জিজ্ঞেস করলো হামলার সময় তিনি কোথায় ছিলেন। আইওয়ান সেই দিনকার মোটরসাইকেল যাত্রা, আকস্মিক হামলা এবং হাসপাতালে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দিলেন।

ছেলেকে দেখিয়ে বললেন এই সেই সন্তান সেদিন সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে যার জন্ম হয়েছিল।

রইসের উত্তর, “আমারও সন্তান আছে। আমি বহু বছর আমার স্ত্রী ও সন্তানকে দেখিনি। আমার ওদের কথা খুব মনে পরে। তোমার চেয়ে আমার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। তোমার সন্তানরা অন্তত তোমার সাথেই আছে। কিন্তু সন্তান আমাকে জানে না পর্যন্ত।”

রইস সারাহ এবং রিজকি’র দিকে তাকাল। তারা দুজনেই তার চোখের দিকে না তাকানোর চেষ্টা করছিল। আমরা জানি সারাহ’র মনে একটা প্রশ্ন রয়েছে।

কিন্তু সে হঠাৎ ভেঙে পরলও। বাবা তাকে দুই হাত দিয়ে আগলে ধরলও। এক পর্যায়ে তার মনের প্রশ্নটি সে করলো রইসকে। খুব নরম সুরে সে জানতে চাইলে কেন সে এমন করেছে।

রইসের উত্তর ছিল, “ওরা যা বলছে, আমি তা করিনি। কিন্তু কেন সেটা করেছি বলে স্বীকার করেছি? এর উত্তর পাওয়া যাবে আমার চোখের দিকে তাকালে।”

অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে যাওয়া নিজের চোখের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথাগুলো বলছিল সে।

“তুমি যখন বড় হবে, হয়ত তখন এর উত্তর তুমি বুঝবে।”

“মুসলিমদের হত্যা করার ব্যাপারে আমার সম্মতি নেই। শুধু আঘাত করার জন্য তুমি মুসলিমদের হত্যা করতে পারো না। সেটা ঠিক নয়।”

আমি জানতে চাইলাম, “কিন্তু হামলার শিকার ব্যক্তিরা যদি মুসলিম না হয়?”

খুব দ্রুত সে উত্তর দিয়ে বলল, “আমি এটার সাথেও একমত নই।”

রইস অন্য কারাবন্দীদেরও প্রভাবিত করতে পারে এই আশংকায় তাকে সম্পূর্ণ একা একটি সেলে রাখা হয়েছে।

আইওয়ান যখন চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখন সে তার সাথে একবার নামাজ পরার অনুরোধ করলো।

“সব মানুষই ভুল করে। যদি কোনভাবে আমি তোমার সাথে অন্যায় করে থাকি, আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আমারও কষ্টের অনুভূতি হয়…সত্যিই।”

বাইরে বের হওয়ার পর আইওয়ানকে দেখে মনে হল এই সাক্ষাত তাকে খুব গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

কান্না চেপে আইওয়ান বললেন, “সে এখনো ভাবছে সে যা করেছে তা সঠিক ছিল। আমার ভয়, সে যদি সুযোগ পায় তাহলে আবারও একই কাজ করবে।”

“আমি খুব হতাশ হলাম। সে অনেক কষ্টের কারণ কিন্তু সেটা সে স্বীকার করতে চাইলো না। আমি আর কী করতে পারি?”

আমরা সবাই মিলে সেনাবাহিনীর একটা বাসে চড়ে বসলাম। রাস্তার ধারে গাছে বানরের দল ঝুলছিল।

দ্বীপটিতে দুটো কারাগার রয়েছে। আমরা বাতু কারাগার থেকে পারমিসান কারাগারে যাচ্ছি আহমাদ হাসান নামে অপর আর এক হামলাকারীর সাথে দেখা করতে।

রায়ের দিন আদালত ত্যাগ করার সময় সে খুব রাগি চোখে টেলিভিশনের ক্যামেরাগুলোর দিকে তাকিয়েছিল। তার হাতও মুঠো করা ছিল। কিন্তু আজ তাকে অন্যরকম মানুষ মনে হল।

তার পরনে কাল রঙের মৌলভিদের আলখাল্লা, মাথায় টুপি। খুব নরম কণ্ঠে কথা বলছিল সে। তার সাথেও আইওয়ানের আগে দেখা হয়েছে।

হাঁটুর উপর হাত রেখে আইওয়ান তাকে বলল “আমি আমার সন্তানদের তোমার সাথে দেখা করতে নিয়ে এসেছি। আমি চাই তারা জানুক তুমি কেন সেদিন বোমা হামলা চালিয়েছিলে।”

হাসান গাম্ভীর্যের সাথে সায় দেয়ার ভঙ্গি করলো।

“আমি তোমাদের বাবাকে বলেছি। তাদেরও জানতে হবে। তারা শিশুকালে তাদের মাকে হারিয়েছে। আল্লাহ’র কাছে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা যে কথাগুলো বলার সুযোগ তিনি আমাকে দিয়েছেন।”

“আমি আসলে তোমার বাবাকে আঘাত করতে চাইনি। তিনি শুধুমাত্র তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার বন্ধু যে বোমাটি বহন করছিলে সে ঠিক তখনই বোমাটিতে বিস্ফোরণ ঘটায়। আমি মনে প্রাণে আশা করি তোমরা এবং তোমাদের বাবা আমাকে ক্ষমা করতে পারবে।”

তার কণ্ঠ ভেঙে আসছিল। সে বলছিল, “আমি অনেক ভুল করেছি।”

সারাহ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বিনয়ের সাথে কিন্তু জোরালোভাবে জিজ্ঞেস করলো সেদিন সে যে ভয়াবহ কাজ করেছে তার কারণ কী?

“আমি ও আমার বন্ধুরা ভুল দীক্ষা পেয়েছি। আমি এখন কামনা করি যে আমরা যদি সেই ভ্রান্ত দীক্ষা অনুযায়ী কাজ না করে আরও জ্ঞান অর্জন করতাম।”

সারা তাকে জানালো কিভাবে তার মা জন্মদিনে মারা গেছে।

বিকেল চারটায় তারা জন্মদিনের পার্টি আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আর সেই আনন্দের দিন কিভাবে শোকার্ত দিনে পরিণত হয়েছিল।

সারাহ বলছিল, “আমি বাবাকে ছোটবেলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার মা কোথায়। বাবা বলেছিল সে সৃষ্টিকর্তার ঘরে রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম সেটা কোথায়। বাবা বলল মসজিদে। আমি তখন দৌড়ে মসজিদে গিয়েছিলাম। আমার দাদি অনেক খুঁজে আমাকে মসজিদের পেল। আমি তাকে বলেছিলাম আমি মায়ের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু সে কোনদিন ফিরে আসেনি।”

হাসান তার চোখ বন্ধ করে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে ধরল। গুনগুন করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো।

সে অবশেষ বলল, “আল্লাহ চেয়েছিলেন আমি যেন তোমাদের বিষয়টা ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হই। কিন্তু আমি অক্ষম। আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

ওই ঘরে তখন যারা ছিল, সবাই কাঁদছিল। আইওয়ান পরে বলছিল, হাসানের কান্না তার জন্য কী ধরনের অর্থ বহন করেছে।

“যখন আমি হাসানকে কাঁদতে দেখলাম, তখন আমি বুঝলাম সে আসলে ভাল মানুষ। সে অন্যের কষ্ট ও দুর্দশা অনুভব করতে জানে। হয়ত সেসময় ভুল মানুষের দ্বারা সে প্রভাবিত হয়েছিল। এখন তার হৃদয়ের উন্মুক্ত হয়েছে।”

এই সাক্ষাতের শেষে তারা একসাথে ছবি তুললো। হাতে হাত ধরে রইল। ক্ষমার যে আবহ সেই কক্ষে সেদিন অনুভব করেছি তা অনবদ্য।

আইওয়ানও তার মন পরিবর্তন করেছেন, “আমি সবসময় বলতাম মৃত্যুদণ্ড ওদের জন্য যথেষ্ট নয়। ওদের চরম কষ্ট দিয়ে মারা উচিত। কিন্তু আল্লাহ ক্ষমাশীলদের পছন্দ করেন।”

অশ্রু মুছতে মুছতে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আবারো সেই বাসে চড়ে বসলাম।

দ্বীপটিতে খুব বিখ্যাত একটি সৈকত রয়েছে। কারাবন্দীরা কখনোই যার দেখা পায় না।

যার নাম পারমিসান সৈকত বা সাদা সৈকত। এখানে দেশটির বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণ হয়। সারাহ, রিজকে ও আইওয়ান সেখানে যেতে চাইল।

সেখানে দেখলাম অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতি। এবড়োখেবড়ো পাথরের উপর সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পরছিল।

একে অপরের হাত ধরে বালির উপর দিয়ে সৈকতে দৌড়াতে শুরু করলো ওরা তিনজন।

সারাহ বলছিল, “আজ আমি এক গভীর শিক্ষা অর্জন করলাম। হাসান ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। মানুষ জঘন্যতম কিছু করেও বদলে যেতে পারে। আমি তাকে ক্ষমা করলাম।”

“আমি মনের মধ্যে একধরনের স্বস্তির ঢেউ অনুভব করছি।”