বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রি অন্যতম উচ্চতায় পৌঁছায়। এ সময়কে কেন্দ্র করে যশোরের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের থাকে বিশেষ প্রস্তুতি
দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। শুক্রবার একইসঙ্গে পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালাবাসা দিবস। তারপর মাত্র ছয় দিন পরই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসকে সামনে রেখে বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালি ও শার্শা উপজেলার ফুলচাষিরা।
বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রি অন্যতম উচ্চতায় পৌঁছায়। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। তারা পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটিকেই ব্যবসায়ের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষি ১৫’শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কমপক্ষে ৪০% চাষ হয় গ্লাডিওলাসের। যা শতকরার হিসেবে সবচেয়ে বেশি। তারপরই ২০% চাষ হয় রজনীগন্ধা, গোলাপের চাষ হয় মাত্র ১৫%। অন্যান্য ফুলের মধ্যে জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের মন রাঙাছেন এখানকার চাষিরা।
সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা শার্শার উলাশী এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িত ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তাদের লক্ষ্য এ মাসেই প্রতিটা ফুলর বাজার ধরা।
শার্শার উলাশী এলাকার ফুল চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, তার বাবাও ফুল চাষ করতেন। এখন তিনিও ফুল চাষে সম্পৃক্ত। তিনি ৩ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এর মধ্যে রজনীগন্ধা, গোলাপ ও জারবেরাই প্রধান। সামনে ফুলের বড় বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছেন।
গদখালির ফুল ফুলচাষী আজগর আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৪ বিঘা গোলাপ, ২ বিঘা জারবেরা ও ১ বিঘা গ্লাডিওলাস ও রডস্টিক চাষ করেছি। আমরা গোলাপের কুঁড়িত ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো। যদি ৭-৮ টাকা বিক্রি করা যায় তাহল মুনাফা বেশি পাবো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, “যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলাসহ এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী ও শার্শা থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবিকা এই চাষ বা ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছে। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলে ও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসকেই তারা টার্গেট করেন এখানকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা।”