দুই মোবাইল অপারেটরের কাছে বিটিআরসির অডিট নির্ধারিত পাওনা দাবি নিয়ে জটিলতার সমাধান হয়নি। এখন যেটা হয়েছে, সেটা নিতান্তই সাময়িক একটি পদক্ষেপ। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে আদালত নির্দেশিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু মূল সংকট এখনও রয়ে গেছে।
শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ন্যূনতম কর এবং করপোরেট ট্যাপ হ্রাস করার দুটি শর্তে রবি পুঁজিবাজারে আসার জন্য আবেদন করবে। এখন পর্যন্ত এ আবেদন করা হয়নি। তবে রবির মূল বিনিয়োগকারী কোম্পানি আজিয়াটার পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে আবেদনের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
রবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় মূলত ২০১৯ সালে রবির ব্যবসার চালচিত্র জানানোর জন্য। গত বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে রবি মোট সাত হাজার ৪৮১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম, চিফ অ্যান্টারপ্রাইজ বিজনেস অফিসার আদিল হোসেন নোবেল, চিফ মার্কেটিং অফিসার শিহাব আহমেদ এবং অ্যাকটিং চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার রুহুল আমিন।
২০১৯ সালে ব্যবসার চিত্র তুলে ধরে রবির সিইও জানান, এ বছরে রবি সাত হাজার ৪৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা পূর্ববর্তী ২০১৮ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এ বছরে রবির কর-পরবর্তী মোট মুনাফার পরিমাণ ১৭ কোটি টাকা আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদত্ত করের পরিমাণ ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডিএর (আর্নিং বিফোর ইন্টারেস্ট, ট্যাপ, ডেপ্রিসিয়েশন অ্যান্ড অ্যামরটাইজেশন) পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
তিনি জানান, যদিও নির্ধারিত করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ, কিন্তু ২০১৯ সালে রবির করপোরেট করের পরিমাণ ছিল ৯০ শতাংশ। এর পাশাপাশি ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ, সিমকার্ডের করের পরিমাণ দ্বিগুণ করা এবং মোবাইল সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কারণে কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ না করার কারণেও কোম্পানি চাপের মুখে পড়েছে। বর্তমানে কোনো গ্রাহক ১০০ টাকা অপারেটরকে কোনো সেবার জন্য দিলে তার মধ্যে ৫১ টাকা ৩০ পয়সা কর ও অন্যান্য প্রদেয় হিসেবে সরকারের কাছে চলে যায় এবং ইকোসিস্টেমে থাকা এনটিটিএনসহ অন্যান্য সংশ্নিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। সব মিলিয়ে ৬৯ টাকা ২০ পয়সা ব্যয় হয়ে যায়। বাকি ৩১ টাকার মধ্যে অপারেটিং ব্যয় হয় আরও প্রায় ২২ টাকা। ফলে অপারেটরের মুনাফা ১০ টাকাও হয় না। এ অবস্থা ব্যবসার জন্য খুবই প্রতিকূল।
এক প্রশ্নের জবাবে রবির সিইও বলেন, রবি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ কারণে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিটিআরসিকে অগ্রিম হিসেবে একটা অংশ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এটা বিটিআরসির অডিট দাবি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে খুবই সাময়িক পদক্ষেপ। মূল যে জটিলতা, সেটা এখনও রয়ে গেছে। রবি আশা করে, আদালতে এই অডিট বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলে অডিট নিয়ে প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। তবে সার্বিকভাবে এ পরিস্থিতিতে রবির মূল বিনিয়োগকারীরা কী পদেক্ষপ বা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের বিষয়। এ ব্যাপারে রবির কিছু করার নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবি পুঁজিবাজারে আসতে চায়। এ ব্যাপারে রবির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আবেদনের অনুমতি দিয়েছে। তবে এখনও আবেদন করা হয়নি। রবি দুটি শর্তসাপেক্ষে শেয়ারবাজারে আসার জন্য আবেদন করবে। এর একটি হচ্ছে ন্যূনতম কর হার ২ শতাংশ থেকে কমানো এবং করপোরেট কর কমানো। এ দুটি শর্ত পূরণ না হলে রবির শেয়ারবাজারে আসার সম্ভাবনা আরও একবার নষ্ট হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম জানান, সংশ্নিষ্ট সেবাদাতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের মূল্য কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা টেলিযোগাযোগ শিল্প, সরকার এবং সার্বিকভাবে দেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে সাধারণ গ্রাহকরাও কোনো সুফল পাবেন না। এ কারণে এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকার জন্য অ্যামটবের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।