রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় ৪টি বাষ্প জেনারেটর ভেসেলের নির্মাণ কাজ চলছে রাশিয়ায়। রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন- রসাটমের অধীনস্ত এইএম টেকনোলজির ভলগাদন্সক কারখানায় প্রথম জেনারেটরটি প্রাইমারি সার্কিট হেডার স্থাপনের কাজ শিগগিরি শুরু হবে। অন্য ৩টির নির্মাণ কাজও বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। রসাটমের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এই কারখানা পরিদর্শন করেন। এই কারখানায় ৪টি শেলের সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে প্রতিটি ভেসেলের সংযোজন কাজ সম্পন্ন হয়। সংযোজনে ওয়েল্ডিং-এর জন্য ব্যবহূত হয় দুই হাজার কেজির অধিক ফ্লাক্স এবং বারো হাজার মিটারের অধিক তার।

বাষ্প জেনারেটর রিয়্যাক্টর প্ল্যান্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার মধ্যে তাপ আদান-প্রদান সম্পন্ন হয়। প্রতিটি জেনারেটরের ওজন প্রায় ৩৪০ টন, লম্বায় ১৫ মিটারের কাছাকাছি এবং ব্যাস ৪ মিটারের বেশি। একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটে এই জাতীয় জেনারেটর থাকে ৪টি। এইএম টেকনোলজি রূপপুর প্রকল্পের দুই ইউনিটের জন্য দু’টি রিয়্যাক্টর এবং দুই সেট বাষ্প জেনারেটর নির্মাণ করছে।

এইএম টেকনোলজির পেত্রাজাভোদস্ক শাখায় প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় কুল্যান্ট পাম্পের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় কুল্যান্ট পাম্প একটি জরুরি অংশ।

কুল্যান্ট পাম্পের গোলাকার কেসিং-এর ওয়েল্ডিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে, কেসিং-এর সঙ্গে ডিসচার্জ ও সাকশন পাইপের ওয়েল্ডিং কাজ চলছে। রিয়্যাক্টরে তাপ শোষণ করে কুল্যান্ট বা শীতলীকরণ পদার্থ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, তাকে বাষ্প জেনারেটরে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহূত হয় এই কুল্যান্ট পাম্প। পাম্পগুলো উচ্চচাপ (১৬০ এটমোস্ম্ফেয়ার) এবং উচ্চতাপে (৩০০ ডিগ্রি সে.) কাজ করতে সক্ষম। প্রতিটি কুল্যান্ট পাম্পের কেসিং-এর ওজন ৩১টনের বেশি, উচ্চতা ৩.৫মিটার এবং প্রস্থে ৩ মিটারেরও বেশি।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাষ্প জেনারেটরের ভেতরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্থাপন এবং জেনারেটর ভেসেলের বিভিন্ন অংশের ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন ও প্রেসার ভেসেলের প্রস্তুত কাজের মূল্যায়ন করেন। কারখানার বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিধি দলকে মূল নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন। পরিদর্শনকালে ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প নয়। দুটি বন্ধুপ্রতীম দেশ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। এই বন্ধুত্বের উদ্দীপনা নিয়েই এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ।

রুশ নকশা অনুযায়ী নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পের দুই ইউনিটেই ৩+ প্রজন্মের সর্বাধুনিক ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর স্থাপিত হবে। রিয়্যাক্টর গুলোর কার্যকাল ৬০ বছর যা প্রয়োজনে আরও ২০ বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব। রূপপুর প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ মসালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে।