দর্পণ ডেস্ক : দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের প্রশংসা করে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রবিবার, ছুটির দিনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন গোটা দেশের প্রায় অর্ধেক জনতা। এখনও পর্যন্ত কোনও অশান্তির খবর আসেনি।
গণ-আন্দোলনে উত্তাল হংকং। তার মধ্যেই আয়োজিত হল হংকং ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের নির্বাচন। শামিল হলেন দেশবাসী। সরকারকে অবাক করে দিয়ে এই নির্বাচনেই রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়ল।
গণতন্ত্রের দাবিতে ক্রমে জোরালো হচ্ছে হংকংয়ের আন্দোলন। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে বিক্ষোভ। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে চীনের কাছে হংকংয়ের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে এত বড় ও জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বহু বছর ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল হংকং। ২২ বছর আগে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় চীনের কাছে। তার পর থেকে স্বশাসিত এই অঞ্চলের মূল কর্তৃত্ব বেজিংয়ের হাতে।
মাসখানেক আগে চীনের অনুগত ক্যারি লাম প্রত্যর্পণ বিল আনার প্রস্তাব দেন পার্লামেন্টে। যা আইন হলে বিচারের প্রয়োজনে কোনও অপরাধীকে হংকং থেকে চিনে প্রত্যর্পণ করতে আর বাধা থাকবে না। এর পরেই ল্যামের ইস্তফা চেয়ে রাস্তায় নামেন মানুষজন। প্রবল প্রতিবাদে সেই বিল আনা স্থগিত রাখেন ল্যাম। তাতেও বিক্ষোভ থামেনি।
এরই মাঝে অনুষ্ঠিত হল ভোট। এই ভোটের ফলাফল ক্যারি ল্যামের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করতে চলেছে। এই ভোটের মাধ্যমে সারা দেশে নির্বাচিত হবেন চারশো জনেরও বেশি প্রতিনিধি। এখন যারা প্রতিনিধি আছেন, তারা বেশিরভাগই চিনপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা সামিল হয়েছেন, তারা এই ভোটের পরে পরিবর্তনের আশা করছেন।
কয়েক মাস ধরে লাগাতার আন্দোলনের জেরে যে ভাবে গোটা হংকংয়ের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, তাতে এই ভোটের মাধ্যমে সঠিক জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করলে, সেই অশান্তি থেমে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
রবিবার ভোটের দিনে যাতে কোথাও কোনও অশান্তি না হয়, সে জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন ছিল সারা দেশের সর্বত্র। তবে ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই মিটে যায়। হংকংয়ের শাসক ক্যারি লাম খুশি প্রকাশ করেছেন এই নির্বিবাদী ভোটে। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলবে এই ভোটগ্রহণ, তার পরে শুরু হবে গণনা। মাঝরাতের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ভোটের ফল।
গত কয়েক মাস ধরেই কানাঘুষা যে, গোটা বিক্ষোভ পর্বে ল্যামের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বেজিং তাকে সরাতে পারে। সরাসরি সে বার্তা এখনও না দিলেও প্রধান বাছাই প্রক্রিয়ায় রদবদলের ভাবনা সেই জল্পনাই আরও উস্কে দিয়েছে।
একই ভাবে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ যাতে চীনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি করে জানতে পারেন, তার জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়েও বদল আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জরুরিভিত্তিক আইনেও পরিবর্তন আনা হতে পারে।তবে চিনের হুঁশিয়ারি থাকলেও হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরছেন না।