১৯৬৬ সাল। বয়স তখন ১৬ বছর। ৫০০ মার্কিন ডলার নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে আমেরিকায় আসেন। পড়াশোনা করেছেন ইলিয়নস ইউনিভার্সিটিতে। এখানে এসেই ক্যারিয়ারের মোড় বদলে ফেলেন। একটি রেস্টুরেন্টে থালা-বাসন পরিষ্কারের চাকরি নেন। রাতে থাকার জন্য ৮ ডলারের আরামের রুম ছেড়ে দুই ডলারের একটি নিম্নমানের রুম ভাড়া নেন
কিছুদিন পর যুক্ত হন ‘ইথা-টিথা পাই’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৯৭১ সালে ইলিয়নস ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। কিছুদিনের মধ্যে ফ্লেক্স-এন-গেইট এ যোগ দেন। তখন ফ্লেক্স-এন-গেইট ছিলো অন্য দশটা কোম্পানির মতোই। ফ্লেক্স-এন-গেইটে যোগ দেয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে কিছু টাকা জমা করেন। কয়েকবছর পর ১৯৭৮ সালে জমানো টাকা দিয়ে একটি গাড়ি বাম্পারিং প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু। ছোটো ট্রাকের যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু করেন। নানা বাধার মুখোমুখি হলেও থেমে যাননি। অল্প কদিনের মধ্যেই গাড়ি-বাম্পারিংয়ের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করেন। এর কিছুদিন পর তার আগের কর্মস্থল ‘ফ্লেক্স-এন-গেইট’ কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮০ সালে ফ্লেক্স-এন-গেইট কিনেও নেন তিনি। তার ছোঁয়ায় অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে ওঠে ফ্লেক্স-এন-গেইট। এই ফ্লেক্স-এন-গেইটই তাকে পৃথিবীর কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিনে নেয়ার পরপরই কোম্পানিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেন তিনি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় তেরো হাজার কর্মচারী।
রেস্টুরেন্টে কাজের সময় টিভিতে দেখে ফুটবল খেলার প্রেমে পড়েন শহীদ। তবে তখন এই খেলায় মন মজলেও কিছুই করার ছিলো না। মনের কোণে জমিয়ে রেখেছিলেন সেই প্রেম। অর্থনৈতিকভাবে সবল হওয়ার পর দৃষ্টি দেন কৈশোরের সেই প্রেম, ফুটবলে। ২০১০ সালে কিনে নেয়ার চেষ্টা করেন ‘সেন্ট লুইজ র্যামস’ নামক একটি ক্লাব।
কিন্তু সেবার তিনি ব্যর্থ হন। ২০১১ সালে তিনি এনএফএল জ্যাকসনভ্যালি জাগুয়ার্স কিনে নেন। এই ক্লাবটি কিনতে তাকে খরচ করতে হয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ছয় হাজার তিনশত পঁচাত্তর কোটি টাকার সমান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালে কিনে নেন আরেকটি বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ফুলহাম এফসি। এছাড়াও ২০১৬ সালে শহীদ খান কিনে নেন বিশ্বখ্যাত স্থাপনা ‘হোটেল টরেন্টো।
১৯৯১ সালে আমেরিকার নাগরিক হন শহীদ। বর্তমানে তিনি স্ত্রী অ্যান কার্লসন, ছেলে টনি খান এবং মেয়ে শাহান্না খানকে নিয়ে বাস করছেন এখানেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় আট বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় আটষট্টি হাজার কোটি টাকার সমান।
শহীদ খানের জন্ম ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের লাহোরে। তিনি একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি আমেরিকান ওইএম অটোমোবাইল ম্যানুফেকচার কোম্পানি ফ্লেক্স-এন-গেইট এর মালিক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও ন্যাশনাল ফুটবল লীগ (এনএফএল) এর জ্যাকসনভ্যালি জাগুয়ার্স এবং ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল লীগের ফুলহাম এফসি এর মালিক তিনি। আবার ‘অল এলিট রেসলিং’ প্রথম শ্রেণির একজন বিনিয়োগকারী তিনি।
সূত্র: ফোর্বস, সাকসেস স্টোরি ডট কম