অনলাইন ডেস্ক : শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমযান। রমযানের রোজা সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরজ। আল্লাহর সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকার নাম হলো রোজা। রমযান মাস আসে প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে।

আমাদের দেশে রমজান মাসে সবাই খাবারের প্রতিযোগিতা নেমে পড়ে। কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে। কিন্তু এসব ভাজা-পোড়া, গুরুপাক খাবার খেয়ে কী হতে পারে, তা কি জানি? সারা দিন রোজা রেখে পাকস্থলী খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তারপর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খাওয়া হয়, তাহলে কী অবস্থা হবে? পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি হবে রোজার নিত্যসঙ্গী।

রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে যা খাবেন :-

কলা : কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া কলা পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে কলার অবদান অপরিসিম।

কফি : কফি একটি জনপ্রিয় পানীয়। এটা আজকাল সবাই খেয়ে থাকে। যখন শরীর থেকে ঘুমের ভাব কাটানোর দরকার হয় তখন বেশিরভাগ মানুষ কফি পান করেন, কিন্তু এটা অন্যান্য কারণেও উপকারি। কারো কারো ক্ষেত্রে এই কফি পেট নরম করতে সাহায্য করে থাকে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গিয়ে অতিরিক্ত কফি পান করে বসবেন না যেন, এতে ডায়রিয়া হয়ে যেতে পারে। ২-৩ কাপের বেশি পান না করাই ভালো।

পানি : এটা তো বলার প্রয়োজন নেই পানি আমাদের দেহের জন্য কতটা উপকার। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শরীর যথেষ্ট পানি না পাওয়ার কারণে তৈরি হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। এ কারণে যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে আপনি যখন ব্যায়াম করবেন বা বাইরে অনেকটা সময় গরমে কাটাবেন, তখন পানি বিশেষভাবে জরুরী।

কমলা : উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ কমলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একটি বা দুটি কমলা খাওয়া অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে। জুস নয়। বরং আস্ত কমলা ফলটাকেই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে যে ফাইবার থাকে। তা আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে শুধু তা নয় সাথে পুরাপুরি সারাতেও সম্ভাব করবে। এটা ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কমলায় থাকা নারিনজেনিন নামের একটি উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সহায়ক।

লাল চাল : যদিও আমাদের সাদা চাল খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু প্রতি কাপ লাল চালে থাকে ৩.৫ গ্রাম ফাইবার। এ ছাড়াও এটি সাধারণ সাদা চালের চাইতে বেশি পুষ্টিকর। আরো খেতে পারেন বিভিন্ন হোল গ্রেইন। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে লাল চালের ভূমিকা অনেক বেশি।

পালং শাক : সবজি হিসেবে পালং আমাদের অনেক পছন্দের। এক কাপ সেদ্ধ পালং শাকেই থাকে চার গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও থাকে ১৫০ মিলিগ্রামের বেশি ম্যাগনেসিয়াম, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পালং শাকের ভূমিকা অপরিসীম।

টকদই : কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টকদইয়ের তো তুলনায় নেই। টকদইয়ের প্রোবায়োটিক গুণাগুণ আপনার হজমের সমস্যাকে দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। এমনকি নিয়মিত টকদই খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকবেই না।

ইসুপগুলের ভুষি : ইসুপগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে খেলে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হয় এটা প্রায় সবাই জানেন। তবে খেতে হবে নিয়ম মতো। অনেকেই ইসুপগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং পরে খান। এতে আসলে উপকার হয় না। বরং পানিতে দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে। আবার অনেক ইসবগুল বা ভূসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এই কথাও বলে থাকে গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘকাল ধরে। একথা সত্যি ইসুপগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক উপকার।

আপেল : আপেলের গুনাগুন তো আমরা কমবেশি জানি। আপেলের খোসার মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার যা খাবার হজমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও আপেলের প্যাক্টিন নিশ্চিত করে পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কর্মক্ষমতা। সবচাইতে ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন খালি পেটে অন্তত ১ টি আপেল খেতে হবে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপেলের উপকারিতা অনেক।

গাজর : গাজর একটি সুস্বাদু সবজি। এই সবজিটি কাঁচাও খাওয়া যায় এবং রান্না করেও খাওয়া যায়। এই অত্যন্ত সুস্বাদু সবজিটি প্রক্রিতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ ভালো উৎস। মাত্র আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে দূরে রাখবে চিরকাল। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গাজর খাওয়ার অভ্যাস করার দরকার।

শসা : শসার বেশীরভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি, আর শসার ডায়াটেরি ফাইবার শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহৌষধ। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করতে সক্ষম নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস থেকে।

কাঠবাদামের তেল : কাঠবাদামের তেল কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। কাঠবাদামের ল্যাক্সাটিভ ইফেক্ট হজম ত্বরান্বিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস দুধে ২ টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে পান করলে সমস্যার দ্রুত সমাধান পাওয়া সম্ভব।

বেলের সরবত : বেলের সরবতও অনেক উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস প্রতিবারে ১ গ্লাস পানিতে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করতে হবে। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের সরবত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।