বিশ্বকাপ থেকেই ছন্দে ছিলেন না তামিম ইকবাল। লম্বা বিরতির পর ফিরেও ভালো করছিলেন না। আত্মবিশ্বাসের তলানিতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যাংকরিং রোল এবং ডট বল করা নিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলেন ১৫৮ রানের রেকর্ড ইনিংস। গতকাল সিলেটে দিলেন চাপমুক্তির সুখবর আর প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন ছন্দটা ধরে রাখার। জিম্বাবুয়ে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হবে আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দু’দিন বিরতি থাকায় গতকাল বিশ্রামে ছিলেন তামিমরা। টিম হোটেলে ব্রিফিং করেন তামিম।

প্রশ্ন :নিজেকে চাপমুক্ত মনে হচ্ছে?

তামিম :অবশ্যই। চাপে তো ছিলামই। একে ‘না’ বললে মিথ্যা কথা বলা হবে। একটা ভালো জিনিস হলো, ব্যাটিং খুব ভালো করছিলাম। আমি হয়তো অত বড় রান করতে পারছিলাম না। টেস্টে যেমন ৪১ রান করলাম। পাকিস্তানে ৩৫ বা ৩৬ রানের একটা ইনিংসও খেললাম। আমার কাছে মনে হয়, সত্যিই ভালো ব্যাটিং করছিলাম। প্র্যাকটিসেও খুব ভালো ব্যাটিং করছিলাম। একটা বিশ্বাস অবশ্যই ছিল- বড় ইনিংস হয়ে যাবে; কিন্তু দুঃখজনক হলো, অনেকদিন ধরেই হচ্ছিল না।

প্রশ্ন :খারাপ সময়ে সতীর্থদের সমর্থন কতটা কাজে দিয়েছে?

তামিম :অনেকেই এর জন্য কৃতিত্ব পাবে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও দলের সতীর্থরা। আমার ওপর তারা আস্থা রেখেছে। একটা মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস হারায়নি তারা। আমি যখন একটু হতাশ হয়ে পড়ছিলাম, তখন তারা সান্ত্বনা দিয়েছে আমি যেন হতাশ না হই। সাধারণত এ রকম সময়ে চারপাশে খুব কম মানুষকেই পাওয়া যায়। তবে দলের সবাইকে এবং ম্যানেজমেন্টকে পাশে পেয়েছি। এমনকি বোর্ড সভাপতিও ফোন করেছেন। তিনি অনেক সুন্দর কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো ভালো লাগার মতো। একটা ভালো শুরু পেয়েছি, চেষ্টা থাকবে ধরে রাখার।

প্রশ্ন :সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এতদিন অ্যাংকর রোল পালন করেছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দেখা গেল হাত খুলে খেলছেন। মাঝখানে কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন?

তামিম :সত্যি কথা বলতে, আমি কোনোকিছুই আলাদা করিনি। একটা জিনিস ছিল, প্রথমে দু-তিনটি বাউন্ডারি বেশি পেয়েছি। একটা ওভারে দুটি বল আমার পায়ে ছিল, যেটা ফ্লিক করে চার মেরে দিয়েছি। এ ছাড়া তেমন কিছু করিনি। একশ’র পর হয়তোবা শট খেলেছি। আমি সব ক্রিকেটিং শটস খেলেছি। এ ম্যাচে যেটা হয়েছে, বল গ্যাপে গেছে। তার আগের ম্যাচে বল গ্যাপে যায়নি দেখে বাউন্ডারি হয়নি। এ ম্যাচে রান ও বল প্রায় সমান সমান হওয়ায় মনে হবে, অনেক কিছু পরিবর্তন করেছি। আসলে তা ঠিক নয়। আমি সবসময় যে ধরনের মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করি, দ্বিতীয় ম্যাচেও তাই করেছি।

প্রশ্ন :আপনার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ২০০ হবে।

তামিম :২০০ তো ৫০ রান দূরে ছিল। ৪২ রান কম করেছি। সত্যি কথা, তখন ওরকম কিছু ভাবিনি। আরও পাঁচ ওভার ছিল, তখন একটা ওভারে ১৫ থেকে ২০ করে নিতে পারলে একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারত। ওই সময় একটা জিনিসই মনে হচ্ছিল, আমি যেন আউট না হই। কারণ, আমি আউট হয়ে গেলে আর ওরকম কোনো ব্যাটসম্যান ছিল না। আমি হিসাব করে, ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটিং করছিলাম।

প্রশ্ন :২০০৯-এ ১৫৪ রান করেছিলেন। বাংলাদেশ ৩১৮ রান চেজ করেছিল। দুইটার মধ্যে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?

তামিম :অবশ্যই ২০০৯ সালেরটা। কারণ তখন প্রথমবার আমরা ৩০০ রান চেজ করে ম্যাচ জিতেছিলাম। এখন ৩০০ রান মানুষ যত সহজে দেখে, ওই সময়ে তা ছিল না। যেভাবে আমরা ইনিংস গড়ে তুলেছিলাম, তাতে ওই ইনিংসকে এগিয়ে রাখব।

প্রশ্ন :শেষ ম্যাচে মুশফিক খেলবেন না- কী বার্তা দেবেন?

তামিম :ক্রিকেট কতটা অনিশ্চয়তার গেম, কালকেই বুঝতে পেরেছি। আমার মনে হয় না কেউ ভাবছিল, এ অবস্থায় চলে যাবে খেলা। একটা ভালো দিক হলো, আমরা জন্য সিরিজ জিতে গেছি। যখনই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলি, অবশ্যই চেষ্টা করি ফল পক্ষে আনার। সে চেষ্টাই করব পরের ম্যাচে। শেষ ম্যাচে আমরা যে ভুলগুলো করেছি, বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে, সেগুলো কম করতে চেষ্টা করব। আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, তাতে আরও ১৫ থেকে ২০ রান বেশি হতে পারত। ওই ভুলগুলো না করে আর একটা পরিস্কার গেম খেলার চেষ্টা থাকবে।

প্রশ্ন :আপনি বলছেন যে হতাশ ছিলেন, তখন আপনি কী করতেন?

তামিম :নেটে যখন ব্যাট করতাম, তখন চেষ্টা থাকত আউট না হতে। টুকটাক কিছু জিনিসও পরিবর্তন করেছি। এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। সত্যি কথা বলতে, যখন ভালো করবেন না এবং জিনিসগুলো উপভোগ করবেন না, তখন খুব কম মানুষই পাশে থাকবে।

প্রশ্ন :ম্যাকেঞ্জি কীভাবে সাহায্য করেছেন?

তামিম :তিনি আমাদের ব্যাটিং কোচ। ব্যাটসম্যানদের যখনই কোনো সমস্যা হয়, তার কাছে যাই। তার পরামর্শ নিতে পছন্দ করি। ওর অনেক পরামর্শ যেটা আমার জন্য ভালো, লিটনের জন্য তা নাও হতে পারে। এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি সবাইকে সাহায্য করেন।

প্রশ্ন :ওপেনিংয়ে সেট পার্টনার পেলে আপনার ব্যাটিং আরও স্বচ্ছন্দ হতে পারে?

তামিম :ভালো একজন ওপেনিং পার্টনার থাকলে দলের জন্য অবশ্যই ভালো। ক্রিকেট ইতিহাস তাই বলে। লিটন অনেক ভালো করছে। সব ফরম্যাটে আমরা জুটি গড়তে পারলে এবং একসঙ্গে অনেকদিন ধরে খেলতে পারলে নিশ্চিত দল উপকৃত হবে।

প্রশ্ন :সাত হাজার রান হলো, ওয়ানডেতে কত রান করতে চান?

তামিম :কত রান করব, কোনো সময় আমি লক্ষ্য সেট করি না। অনেকেই বলবে, সে ১০ হাজার রান করতে চায়; কিন্তু আমি কোনো সময় এটা নিয়ে চিন্তা করি না। যা হচ্ছে সেটা নিয়েই থাকতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন :লিটনের মতো আপনিও কি বিশ্বাস করেন, ক্রিকেট হতাশার খেলা?

তামিম :ক্রিকেট হতাশার খেলা- এটা বলা ঠিক নয়। আমার কাছে মনে হয়, এটা গ্রেট লেভেল। একদিন খুশি হবেন, একদিন হতাশ থাকবেন। এটা মিশ্র অনুভূতির।