বড় ধরনের উত্থানে লেনদেন চলছে দেশের শেয়ারবাজারে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৮৫ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের বাজারদর বেড়েছে। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭২ পয়েন্ট বেড়ে ৪৭৩৭ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। সূচক বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রোববার দুপুর ২টায় দিনের লেনদেন শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দেখা যায়, ২৯৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড দর বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। এ সময় দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল মাত্র ৩১ শেয়ার। দর অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির।

লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ সময় ৮৮ কোম্পানির শেয়ার ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়ে কেনাবেচা হয় ১৭ শেয়ার। যার অন্যতম হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন, সালভো কেমিক্যাল, এসিআই ফর্মূলেশনস, সায়হামটেক্স, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, আফতাব অটো, ব্র্যাক ব্যাংক, এসিআই লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, এপেক্স স্পিনিং, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, মালেক স্পিনিং এবং ফার কেমিক্যাল।

শুধু শেয়ারদর ও সূচকই নয়, শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও বহুলাংশে বেড়েছে। লেনদেনের আধা ঘণ্টা বাকি থাকতেই দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৭৫৮ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০ কোটি টাকার ওপর শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে লাফার্জ-হোলসিম সিমেন্ট এবং খুলনা পাওয়ারের। উভয় কোম্পানি লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছিল।

 চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনের চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম।

দুপুর ২টা শেষে এ বাজারে কেনাবেচা হওয়া ২৫৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২১২টি দর বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছিল, দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায় ২৯টির।

এতে সিএসইর প্রধান মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৩১৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ৮৭৫০ পয়েন্ট ছাড়াতে দেখা গেছে। কেনাবেচা হয়েছে ২৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার।

গত বৃহস্পতিবারও বড় উত্থানে ওই সপ্তাহের লেনদেন শেষ হয়েছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স সূচক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪৫৬৪ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। দিনব্যাপী কেনাবেচা হয়েছিল ৭৩০ কোটি টাকার শেয়ার। এ লেনদেন ছিল গত প্রায় এক বছরের সর্বোচ্চ। আজকের লেনদেন ওই লেনদেনকে এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে।

শেয়ারবাজারের এ উত্থানের নেপথ্যে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিলের ঘোষণা বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিল। এরপর অর্থমন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মত চেয়ে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক মতামত পাঠায়। এরপর সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার রাতে ব্যাংকগুলোর জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন বিষয়ে সার্কুলার জারি করে।

ওই সার্কুলার অনুযায়ী, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। প্রয়োজনে এ অর্থ রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ৫ বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ তহবিলের ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিজেই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি ৬০ শতাংশ নিজ সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ অন্য ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্বতন্ত্র ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণ দিতে পারবে। এ ঋণের অর্থ শুধু শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সার্কুলার জারির পর কয়েকটি ব্যাংক এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত এখনও কোনো ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে রেপোর মাধ্যমে ঋণ গ্রহণে আবেদন করেনি।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, রোববার বিকেল নাগাদ ২/১টি ব্যাংক আবেদন করলেও করতে পারে। তিনি বলেন, অনেকের আগ্রহ আছে। বিশেষত সরকারি ব্যাংকগুলো এ তহবিল গঠন করবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এগিয়ে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।