দর্পণ ডেস্ক : পূর্ব লাদাখে সংঘাতের আবহ না কাটতেই চীনের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে ভারতের। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, অরুণাচল সীমান্তের খুব কাছে নতুন করে অন্তত তিনটি গ্রাম নির্মাণ করেছে চীন।

এ বিষয়ে এখনও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য না করলেও, বিষয়টির ওপর নজর রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।খবরে বলা হয়, ভারত, চীন, ভুটান- তিন দেশের সীমান্তে অবস্থিত বুম লা গিরিপথের জংশনে সীমান্তের মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে নিজেদের ভূখণ্ডে গত এক বছরে অন্তত তিনটি গ্রাম তৈরি করেছে চীন। ইতোমধ্যে উপগ্রহ চিত্রে এসব গ্রামের ছবি ধরা পড়েছে।

অবশ্য ওই অঞ্চলের ছবি আগেও ধরা পড়েছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বুম লা পাস থেকে কিছু দূরে কয়েকটি বাড়ির দেখা মিলেছিল। আর এবার দেখা গেল একবারেই তিনটি গ্রাম তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে ইতোমধ্যেই রাস্তাসহ যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছে তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাম তৈরি করে আসলে ভারতকে চাপে রাখতে চাইছে চীন। অরুণাচলকে ঘিরে চীনের তৎপরতা অবশ্য নতুন নয়। বারবার অরুণাচলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে তারা। কয়েক মাস আগেই ভারতীয় কয়েকজন যুবককে নিজেদের দেশে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল চীনা সেনারা। পরে অবশ্য তাদের ফিরিয়েও দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ভারত সীমান্ত সংলগ্ন নেপাল ও ভুটানের বিস্তীর্ণ এলাকাও দখল করে নিয়েছে চীন। সেখানে বেশ কয়েকটি ভবন তৈরি করেছে চীনা সেনারা। এমনকী ভারত-চীন সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় চীন ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

করোনা পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে চীনের চালের জোগান কমেছে বলে চালের ব্যাপারে ভারতই এখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই বাণিজ্যিক লেনদেন এমন এক সময়ে ঘটছে যখন লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে সমস্যা এখনও মেটেনি। মার্কিন কংগ্রেস কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দাবি করেছে, গত ১৫ জুন গালওয়ানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ সম্ভবত চীনের পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল।

ভারতও এর আগে একাধিকবার গালওয়ানের সংঘর্ষের দায় চীনের ঘাড়ে চাপিয়েছে। এবার মার্কিন রিপোর্টও সেদিকেই ইঙ্গিত করায় ভারতের অবস্থান মজবুত হয়েছে। কিন্তু তাতে চীনের তেমন কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। একদিকে তারা ভারত থেকে চাল কিনছে, অন্যদিকে চীনের ইয়ারলং জাঙ্গবো অর্থাৎ আসামের ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বাঁধ তৈরির ক্ষেত্রে ভারতকে আশ্বস্তও করছে।

গত বুধবারই চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং জানিয়েছেন, ইয়ারলং নদীর নিম্নগতিতে বাঁধ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে চীন। তিব্বতের উৎসমুখ থেকে এই নদীই অরুণাচলে শিয়াং এবং আসামে ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চীন জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য তাদের অংশে বাঁধ দিলে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো পানির কষ্টে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল নয়াদিল্লি।

কিন্তু চীন আশ্বাস দিয়েছে যে, সব দেশের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু এর মধ্যেই আবার অরুণাচল সীমান্তে তিনটি গ্রাম বানানোর বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।