সময়টা বড্ড এলোমেলো যাচ্ছে। প্রবাদে আছে, সকালের সূর্য নাকি সারাদিনের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু এ রোদ-বৃষ্টির শহরে প্রকৃতি যেন এসব তত্ত্বকথা কোনোভাবেই আমলে নেয় না। অভিনেত্রী অহনাও এ ক্ষেত্রে যেন প্রকৃতির সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেছেন। ‘কী হবে আর কী হবে না’- এসব ভাবনার বালাই তিনি করেন না। অভিনয় অন্তপ্রাণ মানুষটি যেন নিরন্তর শিল্পে বেঁধেছেন ঘর। তাই তো অভিনয়জীবনের দীর্ঘসময় পার করলেও তিনি এক ও অভিন্ন। অবশ্য নানা রূপে, নানা চরিত্রে দর্শকের সামনে আসা অহনা কিন্তু সহজেই মানুষের মনের অন্তস্তলে স্থান পাননি। তিলে তিলে নিজেকে করেছেন পরিণত। অতীতের সব পিছুটান ছিন্ন করে এগিয়ে চলছেন আগামীর পথে।

এ এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে দৃঢ়সংকল্প। ভালো করার তাগিদ অহনাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। সেজন্য দর্শকও তাকে ভালোবেসেছেন। আর সে ভালোবাসার প্রতিদান দিতেও অহনা পিছপা হতে চান না। সেজন্য তিনি ছুটে চলছেন প্রতিনিয়ত নতুন চরিত্রের খোঁজে। যার মাধ্যমে দর্শক প্রতিনিয়ত সম্পূর্ণ অন্য এক অহনাকে আবিস্কার করতে পারেন। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন ‘সদরঘাটের টাইগার’ ওয়েব সিরিজে। এ ওয়েব সিরিজে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

প্রথমবার ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছি। এর গল্পটি অসাধারণ, যা অন্য ওয়েব সিরিজ থেকে এটিকে আলাদা করেছে। এতে আমাকে দেখা যাবে বিধবা এক নারীর চরিত্রে। ‘রত্না’ নামে এ নারী চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। সুমন আনোয়ার পরিচালিত এ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে আমিও বেশ তৃপ্ত। নতুন এ মাধ্যমে অভিনয় করতে গিয়ে কিছু ভিন্নতা চোখে পড়েছে। ওয়েব সিরিজের কনটেন্ট কিছুটা ভিন্ন ধরনের। টিভি নাটকের চেয়ে এর বাজেটও বেশি। অনেক সময় নিয়ে দৃশ্যধারণ করা হয়। অনেক যত্নের ছাপ থাকে। তাই এ মাধ্যমে বেশ আগ্রহ নিয়েই অভিনয় করছি।

ইদানীং অহনাকে অভিনয়ের উঠোনে তেমন একটা পাওয়া যায় না। অভিনয়ের বাইরে ব্যস্ততা কী নিয়ে? অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছি। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দিচ্ছি। অভিনয় কমিয়ে দিয়েছি। নাটকে কম কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি ধারাবাহিকে আপাতত আর অভিনয় করব না। গত কয়েক মাস কোনো ধারাবাহিকে শুটিং করিনি, যেজন্য পর্দায় উপস্থিতি কমে গেছে। ওয়েব সিরিজ ও একক নাটকেই শুধু অভিনয় করছি। কারণ ধারাবাহিকে গল্প আমাকে আর সেভাবে টানে না। একই ধরনের গল্প-চরিত্রে কত কাজ করা যায়। সত্যি বলতে, এখন ভিন্নধর্মী গল্প ও চরিত্রের খুব অভাব। বারবার একই চরিত্র। একই রকমের গল্পে অভিনয় করা বেশ বিরক্তিকর একটি বিষয়। এখন গল্পের দুর্বলতা, চরিত্রের ধারাবাহিকতা না থাকা, বাজেট সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে দর্শক নাটক থেকে মুখে ফিরিয়ে নিয়েছেন -বললেন অহনা।

অনেকের অভিযোগ, অহনাকে কমেডি নাটকেই বেশি দেখা যায়। এটি কতখানি সত্য? একটি চরিত্র যখন দর্শকপ্রিয় হয়, তখন সব নির্মাতা একই ধরনের চরিত্র নিয়ে এগিয়ে আসেন। গতানুগতিকার বাইরে কেউ বেরিয়ে আসতে চান না। ‘নোয়াশাল’ নাটকের পর আমি একই ধরনের কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। এটা আমার দুর্ভাগ্য। তবে সম্প্রতি নিজেকে ভাঙার জন্য ‘লাকি থার্টিন’সহ বেশ কয়েকটি নাটকের সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেছি, যা দর্শকদের ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন।

‘চাকরের প্রেম’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় অহনার। এরপর ‘দুই পৃথিবী’ এবং ‘চোখের দেখা’ চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে একাধিক কাজের প্রস্তাব পেলেও শেষ পর্যন্ত ছোটপর্দায় থিতু হন তিনি। অহনা বলেন, ‘চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে মরিয়া হতে হবে- এটি কখনও ভাবি না। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে যে কোনো সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাব।’