দর্পণ ডেস্ক : পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার এবং তা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, রাজউক চেয়ারম্যান, পুলিশ কমিশনার, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকার জেলা প্রশাসক এবং ৪৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (২১ আগস্ট) ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও একজন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), নিজেরা করি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ, গ্রিন ভয়েস এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ৭ দশমিক ৪৭ একর আয়তন বিশিষ্ট পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ যা ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ। এ মাঠে পুরান ঢাকার ৭টি থানা এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। এটি শুধু একটি খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা, বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর জন্যও এ মাঠে যায় লোকজন। ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্য ও গর্বের একটি অংশ। এ মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দলের বেশকিছু খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনও প্রতি বছরই ধূপখোলা মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হয়।
মাঠটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়, এর একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাকি দুটি অংশ ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ। তিনটি অংশের প্রত্যেকটি আকারে একটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড়।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে মাঠে একটি বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে গণশুনানির আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। তাতে এলাকাবাসী বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে ধূপখোলা মাঠ রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেন। গণদাবির মুখে বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও বর্তমানে মাঠটিতে গ্যালারিসহ খেলার মাঠ ও শিশু কর্নার এবং একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। প্রবল জনআপত্তি ও আন্দোলনের ফলে প্রকল্পের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখলেও ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই মাঠের ভেতরে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে একটি বহুতল মার্কেট তৈরির কাজ শুরু করেছে।
নোটিশে অভিযোগ করা হয়, ‘বলা হচ্ছে, এটি মাঠ ‘উন্নয়ন’ উদ্যোগের অংশ। এ মার্কেটের কারণে মাঠের মোট ০ দশমিক ৬২ শতাংশ জায়গা কমে যাবে। বহুতল মার্কেটটি ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মাঠটিতে হাঁটার রাস্তা, বসার ব্যবস্থা, পার্কিং জোন, একটি ক্যাফেটেরিয়া ও শিশুদের জন্য একটি আলাদা জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে মাঠের জায়গা আরও কমবে। কথিত ’উন্নয়ন’ কাজের ফলে ফুটবল মাঠের আকার ৭ দশমিক ৪৭ একর থেকে ৪ দশমিক ০১ একরে নেমে আসবে। এর ফলে উন্মুক্ত ও জনসাধারণের ব্যবহৃত স্থান হিসেবে মাঠের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোই হারিয়ে যাবে আর সাথে হারাবে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।’
তাই নোটিশে ‘অননুমোদিত ও বেআইনিভাবে’ শুরু হওয়া মার্কেট নির্মাণের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে মাঠটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন ।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.