দিবাকর সরকার, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় একজন মাছ ব্যবসায়ীর করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারজন চিকিৎসক, চারজন সেবিকা ও সাতজন কর্মচারীকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকায় করোনা শনাক্ত রোগীর বাড়ী সহ আশে পাশের অন্ততঃ ২৫ টি বাড়ী লকডাউন করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আক্রান্ত ব্যক্তি একজন মাছ ব্যবসায়ী। বয়স ৫০ বছর।তার বাসা পৌরসভার নাচনাপাড়া এলাকায়। গত ১০ মে জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১১ মে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১২ মে দ্রুত তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। সে এখন সেখানকার করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে, এ ঘটনার পরপর বুধবার রাত ১২ টার দিকে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ব্যবসায়ি সমিতির পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করা হয়। শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ব্যতীত সকল ধরনের দোকান-পাট পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সকল ধরনের দোকান-পাট বন্ধ রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বুধবার রাতে পঞ্চাশোর্ধ ওই মাছ বিক্রেতার শরীরে করোনা শনাক্তের পরপরই তার বাড়ি সহ পৌর শহরের নাচনাপাড়া সড়ক ও ১০ টি বাড়ি এবং বৃহস্পতিবার সকালে করোনা পজেটিভ ওই মাছ বিক্রেতার সংস্পর্শে থেকে মাছ বিক্রি করা অন্য মাছ বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মাছ বাজার ও নাইয়াপট্রি এলাকাও লকডাউন করেছে প্রশাসন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার সময় ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরটি আমাদের জানানো হয়েছে। এর পরই করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা তার পরিবারের সদস্যসহ চারজন চিকিৎসক, চারজন নার্স ও সাত কর্মচারীকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদের নমুনা সংগ্রহ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এছাড়া ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সকলের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কলাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আশাদুজ্জামান বলেন, আমরা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বিদেশ থেকে ফিরেছেন ১০৪ জন। তাবলীগ জামাত ফেরৎ ও অন্যান্য ৭৯ জন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯৪ জনের। এ পর্যন্ত ৫৮ জনের রির্পোর্ট পেয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে এই প্রথম এক জনের রির্পোর্ট পজেটিভ এসেছে।

উল্লেখ্য, প্রশাসনের সার্বিক চেষ্টার পরও কলাপাড়াবাসীর মধ্যে করোনা সর্তকতা নিয়ে এতদিন ঢিলেঢালা ভাব বিরাজ করছিল। এমনকি সাধারণ ছুটি ১০মে থেকে শিথিল হওয়ার পর উৎসবের আমেজে করোনার কথা ভুলে হাট-বাজারে বিপুল জনাসমাগম হচ্ছিল। কিন্তু পৌর শহরের একজন সুপরিচিত মাছ ব্যবসায়ী যার কাছ থেকে পৌরবাসীদের প্রায় সকলেই কোন না কোন সময় মাছ কিনেছে, তার করোনাভাইরাস শনাক্তের পর কলাপাড়া শহরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনাতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ।