গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রকাশ্যে এক নারী
আইনজীবীকে শতাধিক লোকের সামনে চর-থাপ্পর-লাথি মারা সহ অকথ্য ভাষায়
গালমন্দ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্’র
বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই নারী আইনজীবীর শ্বশুর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে পায়ের রগ কর্তন এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকীও
দিয়েছেন ওই উপজেলা চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা
চেয়ে গলাচিপা থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন উপজেলার ৯নং কলাগাছিয়া ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দুলাল চৌধুরী।

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরী জানান, ’শারিরীক
অসুস্থতার কারনে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন নিজ জেলার বাইরে ছিলেন তিনি।
বুধবার তিনি গলাচিপা উপজেলার বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তার ব্যবহৃত মোবাইল
ফোনে কল দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ তাকে উপজেলা চত্বরে যেতে বলে।
তিনি অসুস্থতার কারনে যেতে অপারগতা প্রকাশ করায় উপজেলা চেয়ারম্যান আরও
ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় তাকে গালমন্দ করেন। এসময় তিনি এর প্রতিবাদ করলে
শাহিন শাহ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পায়ের রগ কাটা সহ পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী
দেয়। এঘটনা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে জানালে তাকে আইনী সহায়তা নেয়ার
পরামর্শ দেন বলে জানান দুলাল চৌধুরী।’

পরে ঘটনাক্রমে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপস্থিত হন ইউপি চেয়ারম্যানের
পুত্রবধু নারী আইনজীবী উম্মে আসমা আঁখি। এসময় উপজেলা চেরয়াম্যান আখিকে
অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ গালাজ করলে আঁখি এর প্রতিবাদ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে
প্রকাশ্যে আঁখিকে চর-থাপ্পর-লাথি মারেন।

আইনজীবী উম্মে সালমা আঁখি জানান,’ প্রকাশ্যে আমার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান
শাহিন শাহ্ যেভাবে আচরন করেছে তা সভ্য মানুষের কাজ নয়। এ বিষয়ে সে
আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে প্রতিকার চাইবেন বলে জানান।’

গলাচিপা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ বলেন, ’নিরাপত্তা চেয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। আদালতের অনুমতি
সাপেক্ষে তদন্ত করার কথা বলেন তিনি।’

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ’লোকমুখে
ঘটনা শুনেছি। ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে
মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছেন এবং তার পুত্র বধূকে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত
করেছেন।’


এদিকে শুক্রবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান মু. শাহীন শাহ নিজ কার্যালয়ে তার
বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি তার
লিখিত বক্তব্যে বলেন, ’১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার “দৈনিক যুগান্তর” অন
লাইন সংস্করণে সারা দেশের সংবাদে “ভিপি নুরের পর এবার নারী আইনজীবীকে
পেটালেন সেই উপজেলা চেয়ারম্যান” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা সম্পূর্ণ
মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।’

মু. শাহীন শাহ আরও বলেন, ’উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের
মৎস্য চাষি আ. লতিফ হাওলাদারের মাছের ঘেরে পূর্ব শত্রুতার জেরে বিষ
প্রয়োগ করে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ মেরে ফেলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি নিজ
কার্যালয়ে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষন পর চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরীর পুত্রবধূ
নারী আইনজীবী উম্মে আসমা আঁখি উপজেলা পরিষদ চত্বরে মৎস্য চাষি আ. লতিফ
হাওলাদার ও তার ছেলে মাকসুুদুল্লাহকে গালমন্দ করে ও নানা ধরনের ভয় ভীতি
দেখায়। ডাক চিৎকার শুনে তিনি তার কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নেমে আঁখিকে
নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এতে আঁখি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের
সাথে তর্কাতর্কি করেন। এসময় এক নারী আঁখিকে ঘটনাস্থল থেকে টেনে নিয়ে
যান।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
অধ্যাপক সন্তোষ দে, সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো,
ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষি আ. লতিফ হাওলাদার ও তার ছেলে মাকসুদুল্লাহ।