গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ গণধর্ষন
মামলার বাদীর হাত-পা গুড়িয়ে দিয়েছে আসামীরা। মামলার এজাহারভূক্ত আসামি ও
মহিপুর থানা শ্রমিকলীগ সাধারন সম্পাদক শাকিল মৃধার নেতৃত্বে আসামীরা
মঙ্গলবার (১৭সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে ধূলাসার ইউনিয়নের চাপলী বাজারে এ
ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পর স্থানীয়রা সংঙ্গাহীন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য
তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। মহিপুর
থানা পুলিশ বুধবার বেলা ১১টার দিকে শাকিলের এক সহযোগী আবুল খায়েরকে (২৪)
গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি মামুন খলিফার
বাড়ি থেকে চাপাতি, রড ও ভাঙ্গা হকিস্টিক জব্দ করেছে পুলিশ।

আহত সিদ্দিকের স্বজন ও এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাতে বাড়ী
থেকে চাপলী বাজারে যায় মামলার বাদী সিদ্দিক। এ সময় গণধর্ষন মামলার আসামী
শাকিলের নেতৃত্বে শাহআলম, আল-আমিন, রবিউলসহ ৮/১০জন মিলে সিদ্দিককে বেধড়ক
পেটাতে থাকে। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কেউ তাকে রক্ষা করতে
এগিয়ে আসেনি। পরে গুরুতর অবস্থায় ওই বাজার থেকে তাকে তুলে নির্জনে নিয়ে
যায়। সেখানে ছিদ্দিককে চাপাতির উল্টোদিক, হকিস্টিক ও রড দিয়ে পেটানো হয়।
গুড়িয়ে দেয়া হয় তার দুই পা ও এক হাত। পরে সংঙ্গাহীন অবস্থায় সিদ্দিকের
বাড়ী সংলগ্ন পশ্চিম চাপলি এলাকার নির্জন স্থানে তাকে ফেলে রেখে যায় তারা।
খবর পেয়ে তার ভাইসহ এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়।

মহিপুর থানার ওসি মো. সোহেল আহম্মদ জানান, রাত ৯টার দিকে চাপলী বাজারে
যায় সিদ্দিক হাওলাদার। এসময় ধর্ষন মামলার এজাহারভুক্ত আসামী মো. শাকিল
গংরা তাকে পিটিয়ে বাম হাত ও দুই পা ভেঙ্গে দেয়। খবর পেয়ে গুরুতর অবস্থায়
তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার
অবনতি হলে তাৎক্ষনিক তাকে বরিশাল শে.বা.চি.মে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায়
একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান
চলছে।

ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী জানান, এ
মামলার প্রধান আসামি শাহআলম মাঝিসহ অধিকাংশের দলের পদ-পদবী নেই। হঠাৎ
নব্য হাইব্রিড হিসেবে নিজেদের জাহির করে দলের পরিচয়ে এমনসব অপকর্ম করছে
তারা। এরা এলাকায় ত্রাসসহ চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ
সম্পাদক শাকিলের চাপলি বাজারে একটি টর্চার সেল রয়েছে। এদের কারনে
ধূলাসারে এখন দলের ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। এ চক্রের নব্য হাইব্রিড সকলকে
আইনের আওতায় আনা ছাড়াও দলের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্নের দাবি উঠেছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল রাতে ধূলাসার ইউনিয়নের পশ্চিম চাপলী গ্রামে
মহিপুর থানা শ্রমিকলীগের সম্মেলন বিহীন কমিটির সাধারন সম্পাদক শাকিল
মৃধার নেতৃত্বে তার সহযোগী শাহ আলম, শাহিন, রবিউল, আল-আমিন, আ: রশিদসহ
অজ্ঞাত ৭/৮ যুবক স্বামী সিদ্দিক হাওলাদারকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে রেখে তার
স্ত্রী আসমা বেগমকে বাড়ী থেকে পার্শ্ববর্তী নির্জন স্থানে  ও মাছের ঘেরের
ঝুপড়ি ঘরে তুলে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষন করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর
ওয়ানষ্টপ ক্রাইসিস সেল’র সুপারিশের পরও আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মহিপুর
থানা পুলিশ মামলা না নিলে ভিকটিম’র স্বামী সিদ্দিক হাওলাদার বাদী হয়ে
শ্রমিকলীগ সম্পাদক শাকিল মৃধা সহ তার সহযোগীদের আসামী করে ১৭ এপ্রিল
বিজ্ঞ পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে গনধর্ষনের মামলা
দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মহিপুর থানার ওসিকে মামলাটি
এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন।
মহিপুর থানায় ২৩ এপ্রিল মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মহিপুর পুলিশ এ মামলায়
রবিউল ও মামুনকে গ্রেফতার করে। পহেলা জুলাই মহিপুর থানার পরিদর্শক
(তদন্ত) মো. মাহবুবুল আলম মহিপুর থানা শ্রমিক লীগ সম্পাদক শাকিল মৃধা সহ
সাত জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।