দর্পণ ডেস্ক : বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, শিল্পখাতে গ্যাসের দাম নতুন করে ১৩২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে এ খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সম্প্রতি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এক গণশুনানিতে শিল্প-গ্যাসের মূল্য বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৭.৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮.০৪ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধি বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তিনি জানান, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বস্ত্র ও পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া দেশের বস্ত্র কল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শিল্পকে সহায়তা করার জন্য অনতিবিলম্বে একটি জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করুন এবং এই নীতির মাধ্যমে বস্ত্র এবং পোশাক শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ওদিকে গ্যাসের দাম আবারো বাড়ালে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের সামাজিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির চক্রান্তের প্রতিবাদে বুধবার (২০ মার্চ) বিকেলে নগরীর চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে বক্তারা সরকারের প্রতি এ হুঁশিয়ারি দেন।
আমরা নারায়নগঞ্জবাসী’র সভাপতি হাজী নুরুদ্দীন আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নরায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দীক, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল ফেডারেশনের সভাপতি এডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাঈল, নাগরিক সচেতন সমাজের আহ্বায়ক বদরুল হক, নারায়ণগঞ্জ জেলা সুশীল সমাজের সভাপতি হাসমত উল্লাহ, জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত টিপু ও মহানগরের জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোসলেহউদ্দীন আহম্মেদ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার তথাকথিত গণ-শুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি তামাশা করছে। বর্তমানে গ্যাসের মূল্য যে অবস্থায় আছে তা সাধারণ মানুষের অনুকূলে নয়। নারায়ণগঞ্জের অনেক এলাকাতে গ্যাস না থাকলেও প্রতি মাসেই বিল দিতে হচ্ছে। এরপরেও যদি গ্যাসের দাম আবারো বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামবো। বক্তারা এ সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে তিতাস গ্যাসের হেড অফিস ঘেরাও সহ জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ গণ-আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে বিএনপি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর করা হলে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর বিইআরসি এলএনজি মিশ্রিত পাইকারী গ্যাসের মূল্যহার, বিতরণ ও সঞ্চালন মূল্যহার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য মূল্যহার বৃদ্ধি করে গ্যাসের ট্যারিফ/মূল্যহার পুণঃনির্ধারনের আদেশ দেয়। তাতে গ্যাসের সরবারহম মূল্যহার ৭ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সাপ্তাহে তিন মাসের ব্যবধানে সঞ্চালন, বিতরণী কোম্পানিগুলো পাইকারী গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধিসহ সঞ্চালন ও বিতরন সেবার মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। তাতে দেখা যায়, গ্যাসের সরবরাহ মূল্যহার ৮ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ১২ টাকা ১৯ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গত সপ্তাহে গণশুনানি চলাকালে এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের কওরানবাজার অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছে, সরকার যদি এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে সরে না আসে তাহলে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে।