ফাহমিদ সৌরভ

প্রশ্নটা উসকে দিল এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপ। তাহলে কি ফুটবলে সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটল? নাকি এটা নতুন সাম্রাজ্যবাদের শুরু? ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ইতালি-জার্মানি-উরুগুয়ে-স্পেন। ফুটবল বিশ্বকাপের ২০টি আসরের ইতিহাসে ১৮ বারই সোনালী ট্রফিটা জিতেছে এই দেশগুলো। বাকি দুবার বিশ্বকাপ গেছে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে। অথচ ১৮ বার শিরোপা জেতা দলগুলোই নেই সেমিফাইনালের দৌঁড়ে। এটাও সম্ভব। মেসি-রোনালদো-নেইমার-ওজিল, যাদের ছাড়া ফুটবল চিন্তাই করা যায় না কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিলো সেই তারকারা। রাশিয়া বিশ্বকাপে কি তাহলে নতুন সূর্যোদয় ঘটতে যাচ্ছে? উত্তর জানা যাবে, বিশ্বকাপ শেষেই।

রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই পঞ্চপান্ডবকে (ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-জার্মানি-উরুগুয়ে-স্পেন, ইতালি বিশ্বকাপে ওঠারই সুযোগ পায়নি। ফেভারিটের তালিকায় অবশ্য ফ্রান্সও ছিল) সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরেই পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন ফুটবল সমর্থকরা। জার্সি নিবার্চন, গ্রুপ বিশ্লেষণ চলছিল ভালোভাবেই। বিশ্বকাপ শুরুর প্রথম দুদিন সব হিসাব মতোই চলছিল। গন্ডগোল বাধলো তৃতীয় দিন থেকে। মেসির আর্জেন্টিনাকে থামিয়ে দিল আইসল্যান্ড। গত ইউরোতে আইসল্যান্ডের পারফরম্যান্স বিচার করলে আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড ড্রটাকে মেনে নিয়েছিল ফুটবলভক্তরা। চতুর্থ দিনে রং চেনাতে শুরু করে রাশিয়া বিশ্বকাপ। জার্মানি হেরে যায় মেক্সিকোর কাছে আর ব্রাজিল আটকায় সুইসদূর্গে। অঘটনের সেটা কেবল শুরু।

শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দলগুলো আসরে ফেরার চেষ্টায় মগ্ন। ব্রাজিল কোস্টারিকা আর জার্মানি হারাল সুইডেনকে। খেই হারানোর ধারাটা বজায় রাখে আর্জেন্টিনা। হেরে যায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। রাশিয়া বিশ্বকাপের আসল রুপ দেখা যায় গ্রুপ পর্বের একেবারে শেষ দিকে। কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় জার্মানি। এই হারে সব ওলট পালট হয়ে যায়। অন্যদিকে সুইডেনের কাছে হেরে যায় মেক্সিকো, অথচ সেই গ্রুপ থেকে মেক্সিকোকেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন মনে করা হচ্ছিল। জার্মানি বাদ পড়লেও দ্বিতীয় পর্বে উঠে বাকি ফেভারিটরা।

আর্জেন্টিনা গ্রুপ রানার আপ হওয়ায় ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার মধ্যে এক দলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় পর্বেই। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে অনুষ্ঠানিকতাটা সারে ফ্রান্স। ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় মেসির আর্জেন্টিনা। ঈন্দপতনের কেবল শুরু। সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় স্পেন। সাতবারের বিশ্বকাপজয়ী তিন দলের বিদায়ে ততক্ষণে বিস্ময়ে বিভোর ফুটবলভক্তরা। জার্মানি-স্পেন-আর্জেন্টিনার বিদায়ও সামলে নেয় সবাই।

পঞ্চপান্ডবের সম্মান রাখার ভার পড়ে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের ওপর। এডিনসন কাভানি না থাকায় ফ্রান্সের কাছে পাত্তা পায়নি উরুগুয়ে। পরের ম্যাচে বাদ পড়ল ব্রাজিলও! বেলজিয়ামে এসে তরী ডুবল হেক্সা মিশনের। লুকাকু-হ্যাজার্ডে ল্যাটিন সাম্রাজ্যের, পরোক্ষভাবে ফুটবল সাম্রাজ্যেরই সূর্য ডুবল। ১৮ বার বিশ্বকাপ জেতা দলগুলো বিদায় নিলো মধ্যপথে এসে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এবার কি নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্ব? ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এখনো টিকে থাকায় আপাতত পুরনোদের সম্ভাবনা টিকে আছে তবে উদীয়মান দলগুলো যেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করেছে তাতে এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

গত এক শতক ধরে ‘সামাজ্রবাদ’ শব্দটিতে যারপরনায় ঘৃণা রাশিয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাজতন্ত্র এখনো টিকে আছে দেশটিতে। সেই রাশিয়াতেই এবার পতনের মুখে ফুটবল সাম্রাজ্যবাদ। ফুটবলের দেখানো পথে পৃথিবী থেকেও কি ‘সাম্রাজ্যবাদ’ উৎখাত করা না? প্রশ্নটা থেকেই গেল!