গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রাথমিকের শিশু
শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানীর অভিযোগে উমেদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষককে চাকুরী থেকে বরাখাস্তের পর এবার তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীর
মুখে চুমু দেয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে অভিভাবক সহ স্থানীয়রা। অভিযুক্ত
প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইছার বিচার দাবি করে মঙ্গলবার বিকেলে
কাংকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও এলাকাবাসী এ বিক্ষোভে
অংশ গ্রহন করে। স্কুল সংলগ্ন কুয়াকাটাগামী বিকল্প সড়কের চৌরাস্তায় এ
বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বিক্ষোভরত মানুষ
প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেছে।

জানা যায়, উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের কাংকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ ইছা সোমবার বেলা ১১টায় তৃতীয় শ্রেণির
এক ছাত্রীকে একা অফিস রুমে ডেকে নিয়ে স্কুলে না আসার কথা জিজ্ঞেস করে এক
পর্যায় শরীরে হাত দেয়। মুখে চুমু দেয়। প্রথমে ওই ছাত্রী তার এক বোনকে
বিষয়টি বলে। ওই বোন শিশুর বাবা মোস্তফা হাওলাদারকে খবর দেয়। স্কুলে পৌছে
শিশুর কাছ থেকে সব শুনে বিষয়টি নিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ
এনামুল হককে বলেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ এনামুল হক জানান, প্রধান শিক্ষককে
ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করলে পা ধরে ক্ষমা চায়। এমনকি শিশুর বাবা শ্রমজীবী
মোস্তফা হাওলাদারের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইছা।


অভিভাবক মোস্তফা হাওলাদার বলেন, ‘তারাও (শিক্ষকরা) মোগো সন্তানের বাপের
মতো। ও (মেয়ে) দুই দিন স্কুলে যায়নি। একারণে রুমে একা ডাইক্কা মুখে চুমা
দেয়’।
এদিকে এ ঘটনার তদন্তে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
(ভারপ্রাপ্ত) আবুল বাশার মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছেন। লিখিত
অভিযোগ নিয়েছেন। তিনি তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি
তদন্তকালে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের কথা
শুনেছেন। বর্তমানে এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।

একাধিক শিশু শিক্ষার্থী জানায় ওই শিক্ষার্থীর মুখে চুমু দেয়ার পরে মুখ
ধোয়ার জন্য অনুরোধসহ কাউকে ওই কথা না বলতে ক্লাশে ফার্স্ট বানানোর
প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই প্রধান শিক্ষকের অপসারনসহ বিচার দাবি
করেন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা।

পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানায়, হুজুর (হেড) স্যারের কথা না শোনলে
পিটায়। মারধর করে। তার বদলে ছাত্রীরা একজন মহিলা শিক্ষক পদায়ন চেয়েছেন।

অভিভাবক রীণা বেগম জানান, মেয়ে ক্লাশ থ্রিতে পড়ে। তিনিও ওই শিক্ষককে নিয়ে চিন্তিত।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইছা এসব অস্বীকার করে বলেন,
এটি ষড়যন্ত্র। তবে কারা ষড়যন্ত্র করছে তা বলেননি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল বাশার জানান, তিনি তদন্ত করে
দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) অনুপ দাশ জানান, শিক্ষা অফিসারকে
তদন্ত করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন।

প্রসংগত, মাত্র মাসখানেক আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে কলাপাড়ার একজন প্রধান
শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পরে ফের এমন ন্যাক্কারজনক অভিযোগ ওঠায়
অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।