অনলাইন ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা তুরাগ পরিবহনের কয়েকটি বাসবেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত তুরাগ পরিবহনের বাসের চালক রোমান (২৭), কন্ট্রাক্টর মনির (২৭) ও হেলপার নয়নকে (২৯) রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে সোমবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে সায়েদাবাদ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক তথ্যটি নিশ্চিত করেন। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে সোমবার বিকালেই ১৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত ২১ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাড্ডা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে তুরাগ বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন। পথে যাত্রীরা নেমে যেতে থাকলে বাসটি ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে শেষ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে তিনিও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে বাস থেকে নামতে যান। তখন হেলপার-কন্ডাক্টর হাত ধরে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নেমে নিজেকে রক্ষা করেন।
ঘটনার পূর্বাপরঃ
চলন্ত বাসে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা নিয়ে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর ছিল উত্তেজনা। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসে রাজপথে। তারা বিক্ষোভ করে। গাড়ি আটকে রাখে। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১টায় তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে চালকের সহকারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা চালিয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উত্তরা ক্যাম্পাসের সামনে একাধিক তুরাগ বাস আটকে প্রতিবাদ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বলেন, শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার উদ্দেশে বাড্ডা লিং রোড থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠে ওই শিক্ষার্থী। তখন বাসে ৭/৮ জন যাত্রী ছিল। কিছুক্ষণ পর বাসের চালকের সহকারী যাত্রীদের নামিয়ে দেন। এমনকি বাস বেশিদূর যাবে না বলে আর যাত্রী তোলা হয়নি। এসময় ওই শিক্ষার্থীর কিছুটা সন্দেহ হলে তেমন বেশি পাত্তা দেননি।
বাসটি আরো কিছু দূর যাবার পর বাসের সহকারী তাকে বলে, আপা আপনি পেছনে এসে বসেন। এভাবে বাসটি আরো কিছু দূর গেলে বাসের দুই সহকারী তাকে ঘিরে রাখে। তখন ওই শিক্ষার্থী তাদের বলেন আমি পেছনের সিটে গিয়ে বসবো এখানে খুব গরম লাগছে। পরে তারা তাকে পেছনের সিটে যাবার জন্য জায়গা দেয়। কিন্তু সে বাসের গেটের পাশে এসে নামতে চাইলে তার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে চালকের সহকারীরা। এসময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাদের ধাক্কা মেরে বাস থেকে লাফ দেন। পরে অন্য একটি বাসে সে ক্যাম্পাসে গিয়ে বন্ধুদের ঘটনা জানান।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর সন্ধান পেয়েছি। সে আমাদের জানিয়েছে, অন্য যাত্রীদের সঙ্গে সে ওই বাসটিতে উঠে। কিন্তু নতুন বাজার আসার পর বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যায়। তখন বাসের চালকের সহকারী এসে তার পাশের সিটে বসে। এক পর্যায়ে ওই সহকারী শিক্ষার্থীর হাত ধরে হয়রানি করে। এমনকি অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে রাজি না হয়ে বাস থেকে নেমে যেতে চায়। কিন্তু বাসের চালক ও তার সহকারী তাকে বাস থেকে নামতে দেয়নি। পরে বাসটি যখন বসুন্ধরা গিয়ে পৌঁছায় তখন মেয়েটি জোরপূর্বক নেমে যায়। ওসি বলেন, এই ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা চালানোর পর উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে তুরাগের বেশকিছু বাস আটকে প্রতিবাদ করে। ল’ বিভাগের শিক্ষার্থী কিরণ বলেন, ভুক্তভোগী ক্লাসে এসে তার শিক্ষকদের ঘটনা জানালে রাতেই এ বিষয়টি আমাদের ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়। সকালে আমরা সবাই জড়ো হয়ে এর বিচার দাবি করছি। যেহেতু তুরাগ বাসে ঘটনাটি ঘটেছে তাই তুরাগ বাস আটকে প্রশাসনের কাছে অপরাধীর শাস্তি দাবি করছি।