লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়ারী ইউনিয়নের কেচুয়া কোড়া গ্রামে গ্রামের প্রভাবশালীরা অন্যের জমিতে জোর করে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল নতুন বই বিতরন করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। এব্যাপারে নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। তারা বলেছেন অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা। এলাকাবাসী জানায়, কেচুয়া কোড়া গ্রামের জনৈক আব্দুর রহমান তার ছয় সন্তানের যেকোন একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী দেয়ার শর্তে গ্রামে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৪ সালে ৩৩শতক জমি দান করেন। আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা না গেলে এই দানপত্র বাতিল বলেও তিনি দানপত্রে উল্লেখ করেন। ১৯৯৫ সালে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সময় আব্দুর রহমানের কোন সন্তানকে স্কুলে চাকুরী না দেয়ায় তিনি আদালতে মামলা করায় স্কুল প্রতিষ্ঠার সব উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় তৈরী করা টিনের স্কুল ঘরটি এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই দরজা জানালা বেঞ্চসহ কোন আসবাবপত্র। পরে ২০০৮ সালে তার ছয় সন্তান বাবার মৃত্যুর পর জমি ভাগ বাটোয়ারা করার সময় এই জমিটি ছয় ভাইবোনের মধ্যে শরিফা খাতুনকে দেন। ২০১০ সালে শরিফা খাতুন টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জমিটি তার অন্য ভাইবোনের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে ২০১১ সালে তার দুই চাচাতো ভাই কেনা জমিটি তাদের স্ত্রী আফরোজা বেগম ও রুমিয়া খাতুনকে এবং অপর ভাই প্রতিবেশী আব্দুর রহিমের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে সরকার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করলে আব্দুর রহমানের অপর ছেলে শাহাদত হোসেন তার নিজের মেয়ে শামীমা আক্তার সোমাকে প্রধান শিক্ষক এবং অন্য তিনজনকে প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় টাকার বিনিময়ে এই জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা শুরু করেন। কাগজে কলমে ২০০৯ সালে নিয়োগ দেখানো হলেও পুরনো শীর্ণ ঘরটি ধোয়ামোছা করে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ১০ সেট নতুন বই বিতরন করার মধ্য দিয়ে মূলত এই স্কুলের পাঠদান শুরু করা হয়েছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। বড়াইগ্রাম উপজেলা শিক্ষা অফিসও ১০ সেট নতুন বই বিতরন করার কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শামীমা আক্তার সোমা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বরাবরই তার স্কুলে পাঠদান চলছে, তার স্কুলে ৫০ থেকে ৬০জন ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছে। জমির বিষয়ে তার বাবা শাহাদত হোসেন বলেছেন, জমিটি তার বাবা মরহুম আব্দুর রহমান দান করার সময় ১০ বছরের কোন শর্ত ছিল না। তবে তারা ছয় ভাই বোন জমি ভাগবাটোয়ারা করার সময় কিসের ভিত্তিতে জমিটি বোন শরিফা খাতুনকে দিয়েছিলেন তার কোন জবাব তিনি দেন নাই। বুধবার এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমন অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ. কে. এম আমিরুল ইসলাম বলেছেন, নতুন করে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা অনুমোদনের কোন চিন্তাই সরকারের নেই, অথচ অহেতুক এসব করে কেন যে অশান্তি করা হচ্ছে তা তার বোধগম্য নয়।