অনলাইন ডেস্ক : পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের লেফট্যানেন্ট গভর্নর প্রার্থী বাংলাদেশের মেয়ে আমেরিকান নাগরিক ড. নীনা আহমেদ বলেছেন, ‘ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারও বেড়ে চলেছে। তবে আমি থামবার মানুষ নই। দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে তৃণমূলের অভিবাসী, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের জন্য কাজ করছি। এসময় বিষয়টি অনুভব করতে শিখেছি। আমি এটাও জানি যে, নির্বাচনে জয়ী হতে হলে মোটা চামড়া লাগে।’

বুধবার (২ মে) নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে প্রবাসীদের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. নীনা বলেন, ‘বহু কারণে আমাদের এই সমাজের অনেক মানুষ এখনও অবহেলিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, তাদের প্রকৃত পরিস্থিতি প্রশাসনে যথাযথভাবে উপস্থাপন এবং তার স্থায়ী সমাধানের জন্যই আমি কাজ করবো।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণে অবদান রাখার স্বার্থেই প্রত্যেক প্রবাসীকে আরও জোরালোভাবে মার্কিন রাজনীতির সাথে মিশতে হবে। বাংলাদেশিসহ সকল অভিবাসীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে সকলকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। ডেমক্র্যাটদের বিজয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায়-অবিচার রুখে দেয়ার পথ সুগম করতে হবে।’

‘বাংলাদেশি-আমেরিকান কম্যুনিটি কাউন্সিল’র উদ্যোগে ড. নীনার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর সমাগম ঘটে।

আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এবং মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ এন মজুমদার স্বাগত বক্তব্যের পর ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই নেতা আরও বলেন, ‘সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সময় হচ্ছে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার।’

ড. নীনা বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার বিরুদ্ধে আরও ৪ জন লড়ছেন। তবে অন্য সকলের চেয়ে আমার নির্বাচনী তহবিল বেশি। আমার টিভি বিজ্ঞাপণ চলছে দারুণভাবে। এ খাতে ব্যয় হচ্ছে সপ্তাহে ২ লাখ ডলার করে। আর এ অর্থ আসছে আপনাদের মত মেহনতি মানুষের পকেট থেকে। আমাকে কোনো কর্পোরেশন কিংবা কায়েমী-স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কাছে থেকে অর্থ নিতে হচ্ছে না। এটাই আমার প্লাস পয়েন্ট।’

বাংলাদেশের মেয়ে ড. নীনা বলেন, ‘আমার নির্বাচনী তহবিলে আপনারা যে অর্থ দিচ্ছেন তা আসলে আমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষায় বিনিয়োগের সামিল। আমরা চাই, আমাদের সন্তানেরা যেন সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে। বহুজাতিক এ সমাজে নিজেদের কখনো দুর্বল না ভাবে।’

১৫ মে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচন। ড. নীনা সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সবগুলো জরিপে। ২৫ বছরের অধিক সময় ধরে অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কাজ করার সুফল হিসেবে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের সকল প্রান্তে ড. নীনার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই অন্য অঙ্গরাজ্যের প্রবাসীরাও তার নির্বাচনী তহবিল গড়তে সোচ্চার হয়েছেন।

এ অনুষ্ঠানে ড. নীনার পক্ষে আরও বক্তব্য রাখেন মার্কিন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকান লেবার এলায়েন্সের (এসাল) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে যে, ড. নীনার বিজয় ঘটলে আমরা সকলেই বিজয়ী হবো। আর পরাজিত হলে, সকলকেই পরাজয় বরণ করতে হবে। এ বিবেচনা থেকেই সকলকে সর্বাত্মকভাবে সরব থাকতে হবে নীনার বিজয়ের জন্য।’

নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে দুই ঈদের দিন ছুটি এবং নির্বাচনী ব্যালটে বাংলা ভাষা সংযোজনের দাবি আদায়ে সিটি প্রশাসনে লবিং শুরু করেছিল ‘এসাল’। সে কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিসবাহ বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিজয় অবশ্যম্ভাবী। ড. নীনার পক্ষে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় কখনো হাতছাড়া হবে না।’

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়ান-আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ফিলাডেলফিয়া সিটির সাবেক ডেপুটি মেয়র ড. নীনাকে প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে অভিহিত করে আরও বক্তব্য রাখেন কম্যুনিটি লিডার হাসান আলী, আব্দুস শহীদ এবং ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, হোস্ট সংগঠনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সাখাওয়াত আলী, সেক্রেটারি নজরুল হক, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৮৬ এর প্রার্থী কারিনেস মেয়াস, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি প্রার্থী কাজী নয়ন, সেক্রেটারি প্রার্থী মোহাম্মদ আলী, মামুন টিউটোরিয়ালের শেখ আল মামুন প্রমুখ।

এ সময় কম্যুনিটি সার্ভিসের জন্য ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা হাজী আ. কাদের মিয়া, কম্যুনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সমাজকর্মী সাঈদুর রহমান লিংকন, ব্যবসায়ী-সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন, আলমগীর মোল্লাহ, কায়সারুজ্জামান কয়েস, এম রহমান খোকন, আব্দুল চৌধুরী জাকি, এম রহমান খলিলকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এগুলো বিপুল করতালির মধ্যে হস্তান্তর করেন ড. নীনা।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে চমৎকার এ অনুষ্ঠান শুরু হয় পিজা ফজিলাতুনের উপস্থাপনায়। ড. নীনার পরিচয় তোলে ধরেন আয়শা হোসাইন।

ড. নীনা তার বক্তব্যের সময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, সরাফ সরকারকে পাশে নিয়ে বক্তৃতা করেন।

ড. নীনা বলেন, ‘এই মানুষেরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন বলেই আজ আমরা লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। সবুজ পাসপোর্ট বহন করে এই বহুজাতিক সমাজে বসতি গড়তে সক্ষম হয়েছি। তাই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। মার্কিন প্রশাসনে দেন-দরবারের জন্য ভীষণ প্রয়োজন মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া।’

অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর ও সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট কাইয়ুম চৌধুরী, প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. তনিমা হক, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রেক্সোনা মজুমদার, আলী ইমাম, আজহারুল ইসলাম মিলন, বাংলা বাজার মসজিদের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন প্রমুখ।