রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আনন্দ সিনেমা হলের সামনে রয়েছে পুরনো একটি বটগাছ। সেটার দিকে তাকালে এমন হরেক রকমের বিজ্ঞাপনের দেখা মেলে। বছরজুড়ে গাছটির বেশিরভাগ অংশ বিজ্ঞাপনে ঢাকা থাকে। এ একটি উদাহরণ ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, মগবাজার, শাহবাগ, আগারগাঁও, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারের বড় বড় গাছের কাণ্ড ঢাকছে বিজ্ঞাপনের বহরে। দেদারছে গেঁথে যাচ্ছে পেরেক। খরচ ছাড়া বিজ্ঞাপন। গাছের ক্ষতি হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে গাছ। লেমিনেটিং পেপারে আচ্ছাদিত বাড়ি ভাড়া, সাবলেট থেকে শুরু করে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন পেরেক ঠুকে লাগানো হয় সড়কের পাশের গাছে। এমনকি ঝড়ে বিধ্বস্ত অর্ধমৃত গাছটিও বাদ যায় না বিজ্ঞাপনের পেরেকের এমন নিষ্ঠুর আঘাত থেকে।
গুলিস্তানে সার্জেন্ট আজাদ পুলিশ বক্সের সামনের একটি গাছে কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন টাঙাচ্ছিলেন দুই যুবক। তাদের একজন সাব্বির মিয়া। তিনি বলেন, ‘কোচিং সেন্টারের লোকজন এমন জায়গায় লাগাতে বলেছেন, যেখানে মানুষের চোখ পড়বে। এজন্য গাছে লাগাচ্ছি। আর গাছে লাগানো সহজ, দশ সেকেন্ডে হয়ে যায়। মানুষের দৃষ্টিও পড়ে বেশি।’ কথা বলে জানা গেল, গাছে লাগানো ঠিক না সেটা তারা জানেন। তবে আইনের বিষয়ে কেউ অবগত নন। ‘সবাই লাগিয়েছে দেখে আমরাও লাগিয়েছি।’-—এমনটাই বললেন দুই যুবক।
সাব্বিরদের মতো যুবকদের এমন নির্মম আঘাতে অসংখ্য গাছের জীবননাশ হয়েছে। বিশ্বনন্দিত বাঙালী বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের প্রাণ আবিষ্কার করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রাণীদের মতো উদ্ভিদও আঘাত পেলে কষ্ট পায়- তা তিনি উপলদ্ধি করেছেন। সে কারণে তিনি মহান ও অমর। পেরেক ঠুকে গাছের জীবন নাশকারীরা তা উপলব্ধি করা তো দূরের কথা বরং এ নিষ্ঠুর কাজটি নির্দ্বিধায় করেই চলছেন। পেরেকের ওপর পেরেক লাগিয়েই যেন তারা শান্তি পান!
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, আঘাত পেলে আমাদের যেমন রক্ত বের হয়, তেমনি গাছকে আঘাত করলে এক ধরনের রস বের হয়। এটি একটি অমানবিক কাজ।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষন ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, গাছে পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ সময় গাছটি মারা যায়।
গাছ কাটলে উজাড় হয় বন, দূষিত হয় বাতাস, প্রকৃতি হয় ভারসাম্যহীন। গাছ কাটলে তারাও কাঁদে। গাছের কান্নার সঙ্গে কাঁদে হাজারো পাখি , কীটপতঙ্গ। নিঃশব্দ সে কান্না! শব্দময় পৃথিবীতে মানুষের সীমাবদ্ধ শক্তির কারণে সে কান্নার শব্দ ধরা পড়ে না।