মোঃ লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি:
শেকড় সন্ধানী কথা সাহিত্যিক শফীউদ্দীন সরদার আর নেই। বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে নাটোর শহরের শুকুলপট্টি এলাকার নিজ বাস ভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৪ বছর। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব শহরের গাড়িখানা মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে গাড়িখানা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মৃত্যুকালে তিনি ৪ ছেলে ৫ মেয়ে ও নাতি নাতনিসহ সারাদেশে অসংখ্য গুনগ্রাহী ও শুভাকাংখী পাঠক রেখে গেছেন। গত জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে তিনি ফুসফুস ও কিডনীর জটিলতায় আক্রান্ত হলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় ১০ দিন আইসিইউতে থাকার পর গত সোমবার ভোরে তাঁকে তাঁর নিজ বাড়ি নাটোর শহরের শুকুলপট্টির ‘সরদার মঞ্জিল’ এ নিয়ে আসা হয়। গুনী এই লেখক ১৯৩৫ সালের ১ মে নাটোর সদর উপজেলার হাটবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, নাটক, রম্য রচনা, কল্প কাহিনী সহ শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৯৫০ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ, বিএ অনার্স এবং এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন ডিগ্রী লাভ করেন। নিজ গ্রামের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি একে একে রাজশাহী সরকারী কলেজ ও রাজশাহীর সারদা ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা এবং বানেশ্বর কলেজ ও নাটোর রাণী ভবাণী সরকারী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় শিক্ষক ও পরে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হলেও এক সময় যাত্রাসহ মঞ্চ নাটকে দাপুটে অভিনেতাও ছিলেন তিনি। জীবনের বেশির ভাগ সময় শিক্ষকতা ও লেখালেখিতে পার করলেও এক সময় যাত্রাসহ মঞ্চ নাটকে দাপুটে অভিনেতাও ছিলেন তিনি। তার রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস চলনবিলের পদাবলি দেশের কোন প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ না করায় তিনি আজীবন ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস রচনার সিন্ধান্ত নেয় । সেই থেকে তিনি একে একে রচনা করেন রুপনগরের বন্দী, বখতিয়ারের তালোয়ার, গৈাড় থেকে সোনারগাঁ, যায় বেলা অবেলায়, বিদ্রোহী জাতক, বার পাইকার দূর্গ, রাজ বিহঙ্গ,শেষ প্রহরী, বারো ভূঁইয়া উপাখ্যান, প্রেম ও পূর্ণিমা, বিপন্ন প্রহর, সূর্যাস্ত, পথহারা পাখি, বৈরী বসতী, অন্তরে প্রান্তরে, দাবানল, ঠিকানা, ঝড়মুখো ঘর, অবৈধ অরণ্য, দখল, রোহিণী নদীর তীরে ও ঈমানদার এর মতো জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস। এ ছাড়াও অপূর্ব অপেরা, শীত বসন্তের গীত, পাষানী, দুপুরের পর, রাজ্য ও রাজকণ্যারা, থার্ড পন্ডিত, মুসাফির, ও গুনাগার নামে বেশ কয়েকটি সামাজিক উপন্যাস বরই উপভোগ্য। তার রচিত ভ্রমন কাহিনীর মধ্যে ”সুদূর মক্কা মদীনার পথে’ উলে¬খ যোগ্য। কল্প কাহিনী সুলতানার দেহরক্ষী, রম্য রচনা রাম ছাগলের আব্বাজান, চার চাঁন্দের কেচ্ছা ও অমরত্বের সন্ধানে উলে¬খ যোগ্য। শিশু সাহিত্য ভূতের মেয়ে লীলাবতী, পরীরাজ্যের রাজকন্যা ও রাজার মেয়ে কবিরাজ উলে¬খ যোগ্য। কবি আল মাহ্মুদের ভাষায় ‘শফীউদ্দিন সরদার বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে এক চিত্রি অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। যিনি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম বীরত্বগাঁথার মহান উপস্থাপক। তিনি আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কথা শিল্পী। আমি উপন্যাসিক শিল্পীর একজন ভক্ত’। কবি আল মাহ্মুদের পছন্দের এই কথাশিল্পী রাষ্ট্রিয়ভাবে তার কর্মের কোন স্বীকৃতি না পেয়েই আজ তার শেষ নিশ^াস ত্যাগ করেছেন। যদিও তিনি স্বীকৃতির জন্য লালায়িতও ছিলেন না। এই মহান মানুষটির মৃত্যুর খবর জানা জানি হলে নাটোরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.