দিল্লির দাঙ্গায় হারিয়ে যাওয়া বছর দুয়েকের সেই শিশুটি অবশেষে তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ওই শিশুকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদেনে জানিয়েছে বিবিসি।
দাঙ্গার মধ্যে পড়ে শিশু হারিয়ে যওযার খবরটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর একটি টিম গঠন করে দিল্লি পুলিশ। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খবর নেয় তারা। মসজিদ থেকেও ঘোষণা দিয়ে শিশু পাওয়ার কথা জানানো হয়।
অবশেষে বুধবার সোফিয়া নামের শিশুটির দাদা মোহাম্মদ হারুন স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় পুলিশের কাছে এসে তার নাতি নিখোঁজের খবরটি নিশ্চিত করে তাকে নিয়ে যান।
হারুন জানান, তার ছেলে ও ছেলের স্ত্রী শ্রমিকের কাজ করার জন্য শহরের অন্য প্রান্তে বসবাস করেন। এজন্যই সোফিয়াকে কাছে রাখেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রমাণ দিয়ে শিশুটির বাবা-মা তাদের সন্তানকে নিয়ে গেছে। ২৪ ফেব্রুযারি থেকে তার দাদার কাছ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সহিংসতার মধ্যে সম্প্রতি হারানো শিশু সোফিয়ার করুণ গল্প সামনে আসে। কোথায় তার বাড়িঘর, কোথায় তার বাবা-মা, স্বজন কিছুই বলতে পারছিল না সে।
এক পর্যায়ে শিশুটি মমতার আশ্রয় পায দাঙ্গাকবলিত আরেক পরিবারের কাছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিব বিহারের বাসিন্দা সৌদ আলম মদিনা মসজিদের কাছে কান্নারত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে সঙ্গে নিয়ে যান।
২৪ ফেব্রুয়ারির দাঙ্গার সময় সৌদ আলমদের বাড়ির দরজায়ও পৌঁছে যায় সহিংসতা। সংঘবদ্ধ একদল দাঙ্গাবাজ তাদের ভাড়া বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসরত অন্য অনেক মুসলমানের মতো আলম আর তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের পরনের কাপড় নিয়েই পালাতে বাধ্য হন।
পালানোর সময় পরিবারটি দেখতে পায়, একটি মসজিদে হামলা চালানো হচ্ছে। তখনই ওই শিশুটিকে একা একা সেখানে কাঁদতে দেখেন সৌদ আলম। শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের পরিবারের সঙ্গে তাকে নিয়ে আশ্রয় নেন কাছের বাবুনগর এলাকার অন্য এক মসজিদে। পরে তাদের আশ্রয় হয় একটি খালি বাড়িতে।
আলম বলেন, ‘তার বাবা-মা কে বা কোথায় আছেন, কেউ বলতে পারেনি। আমরা যদি তাকে সঙ্গে না আনতাম, তাহলে হয়তো হামলাকারীরা তাকেও মেরে ফেলত।’