মোঃ মঞ্জুর আহমেদ, ইউকে (লন্ডন) স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট :

বাংলাদেশের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার (বিডিআর) পুত্র মোঃ মনজুর আহমেদ যে নাকি মাতৃগর্ভে থাকতেই তার জন্মদাতা পিতা দেশকে স্বাধীন করতে ১৯৭১ সালে রনাঙ্গনে বীরের মতো প্রান দেন। পিতৃহারা শৈশব-কৈশোরে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে জয়ী হয়ে দক্ষিনের সাগরবিধৌত কলাপাড়া উপজেলার সেই ছেলেটি নিজ এলাকায় প্রাথমিকের শিক্ষা, খেপুপাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ (BNMPC) (সাবেক রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ) থেকে সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টায় এইচএসসি’র গন্ডি সফলভাবে শেষ করেন, ১৯৯৩ ঢাকা কলেজ থেকে বিএ (পাশ) করে ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ বেসামরিক সহকারী পদে বাংলাদে রাইফেলস এ চাকুরির পাশাপাশি এল এল বি ১৯৯৮, এবং এম এস এস (সমাজ বিজ্ঞান) বিষয়ে স্নাতকোত্তর যোগ্যতা অর্জণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর চাকুরি থেকে অকালিন অবসর গ্রহণ করে যুক্তরাজ্য, লন্ডন লেখাপডার জন্য প্রবাস জীবন শুরু করেন এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস্ থেকে ২০১০ সালে এম বি এ ডিগ্রি সফলতার সাথে অর্জণ করেন। বর্তমানে এন এইচ এস এস ট্রাস্ট, কুইন্স হসপিটাল, লন্ডন কর্মরত পাশাপাশি আইন পেশা ও ব্যাবসার সাথে জড়িত । পারিবারিক জীবনে ২০০৮ সাল থেকে স্ত্রী ও ২ ছেলে তার সাথে লন্ডন বসবাস শুরু করেন । বড় ছেলে আহমেদ আল আমিন প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে স্নাতক ডিগ্রী গ্রীনউইচ ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৯ সালে ফিজিক্যাল এ্যাডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সম্মান সম্পন্ন করে। ছোট ছেলে একই ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বর্তমানে ওয়েসমিনিস্টার ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি এন্ড কাঊন্সিলিং বিষয়ে অনার্স অধ্যায়নরত। স্ত্রী মিসেস রেবেকা সুলতানা পাপড়ি ক্যামডেন কাউন্সিল, লন্ডন কর্মরত। তিনি স্বপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবিধাসহ ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জণ করেছেন। তার জীবনের খুব কাছ থেকে দেখা জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী তিনি তার জ্ঞান দ্বারা লেখনীতে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সাবলীল ছন্দে। দর্পণ প্রতিদিনের পাঠকদের কাছে তা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো। আজ তার বিচিত্র জীবনের সচিত্র প্রতিবেদন পর্ব-৭ প্রকাশ করা হলো। – গনেশ চন্দ্র হাওলাদার, বার্তা সম্পাদক, দৈনিক দর্পণ প্রতিদিন।

‘বন্ধুত্ব’ ছোট্ট শব্দটি মানুষের জীবনে যে কোন বয়সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। বন্ধুত্বেরমাঝে থাকে প্রেম, ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা, বহুরূপী অনুভূতি বন্ধুত্ব সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর প্রত্যেক ব্যক্তিই আলাদা। বন্ধুত্বে জন্য বেশী কিছুর প্রয়োজন হয় না শুধু একটা সাদা উদার মনের প্রয়োজন। যেটা সারা পৃথিবী জুড়ে নীল আকাশ, সকল সমুদ্র-মহা সমুদ্র সমতুল্য। বন্ধুত্বের কাছে সকল স্বার্থ পরাভূত/পরাজিত। বন্ধুত্ব অশরিরী এক সকল অনুভব সমানুপাতিক।

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোন বয়স সীমা নেই। নেই কোন লিঙ্গ ভেদাভেদ, বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রয়োজন পরে না। শুধু সহজ সরল সুন্দর মনের প্রয়োজন হয়। সাদা মনের মানুষ হতে হয়, হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করতে হয়। সমান্তরাল অনুভূতির মিলন ঘটাতে হয়। আলাদা দেহ থাকলে আত্মার সম্পর্ক/বন্ধন এক হয়। স্থান-কাল বলতে কোন কিছুর পার্থক্য থাকে না। মনের গহীনে এক সূতায় বাঁধা বন্ধনই হচ্ছে বন্ধুত্ব।

বন্ধুত্ব কি শুধু মানুষে-মানুষে হয়?
বন্ধুত্ব সীমাহীন পরিব্যাপ্তি। মানুষই পারে বন্ধুত্ব তৈরী করতে পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকূলের সাথে। যেহেতু উদ্ভিদের ও জীবন ও অনুভূতি আছে। লজ্জাবতী গাছে স্পর্শ করলে কি অদ্ভুত ভীষণ লজ্জা পায় এবং পাতাগুলো সাথে সাথে সংকুচিত হয়ে যায়। নিয়মিত পরিচর্যা করলে মানুষ ও গাছে বন্ধুত্ব গভীর ও নীবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে, প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। যে কোন প্রাণির সাথে বন্ধুত্ব করা তো আরো সহজ। এমনকি হিংস্র প্রাণির সাথেও ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব / সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা মানুষের রয়েছে। বিষধর সাপও পোষমানে বন্ধুত্বের তাগিদে। হিংস্র বাঘও শেষ পর্যন্ত বশ্যতা স্বীকার করে মানুষের সাথে বন্ধুত্বের ফলে। গভীর সমুদ্রের তলদেশে সংগৃহীত জলজ প্রাণিও মানুষের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। পাখ-পাখালি পোকা-মাকড় সবাই প্রেমের পাগল ভালোবাসার পাগল। প্রেমের কাঙ্গাল। বন্ধুত্বের বন্ধন স্বজাতির বাহিরে মানুষের সাথে গভীর ও ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে। আদিকাল থেকে মানুষের প্রথম বিশ্বস্ত প্রাণী কুকুর। কুকুর প্রভুভক্ত, বিশ্বস্ত, ও প্রতিদান রক্ষাকারী প্রাণী। কুকুরের ভালো বাসা আধুনিক যুগে উন্নত দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে আজও পরিলক্ষিত হয়। যা যত দিন পৃথিবী থাকবে ততোদিন বিদ্যমান রবে বলে আমার বিশ্বাস, যে কোন জীব, প্রাণি, উদ্ভিদের বন্ধুত্ব অধিক পবিত্র, বিশ্বস্ত, গ্রহণযোগ্য দীর্ঘস্থায়ী। আশির দশকে তেরি মেহেরবানিয়ান হিন্দি ছবিতে একটি কুকুরের ভূমিকা, বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। ইংরেজী ফিল্ম ‘কিংকং। যে কোন বয়সী মানুষের দেখার মতো ছবি। মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত, কিন্তু এর পরিব্যাপ্তি বিস্তৃর্ণ। মৃত্যুর পরেও মানুষ চিরঞ্জীব হয় কর্মকান্ডে মানব হৈতৌষীকর কাজে, কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে, সর্বোপরি ভালোবাসা প্রেম ও বন্ধুত্বের কারনে। বন্ধুত্ব কোন আবিস্কারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বলছি জড় বস্তুর সাথে বিজ্ঞানের জয় যাত্রা মানুষের হাত ধরেই বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। কোন কাজ কে যদি কেউ ভালো না বাসে বন্ধুত্ব তৈরী করতে না পারে তবে তার সাথে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ক্ষণস্থায়ী সম্পর্ক কখনো বন্ধুত্ব তৈরী করে না শুধু স্বার্থের কথা ভাবে যা ধ্রুব সত্য। দিন-রাত হিসাব না করে। একজন বিজ্ঞানী খেয়ে-না খেয়ে মানব ও জীবকূলের কল্যাণের জন্য কিছু না কিছু আবিষ্কার করে শুধুমাত্র প্রেমের কারণে ভালবাসার মাধ্যমে প্রেমের বন্ধুত্বের বন্দনে শুধু মাস্ত্র – ভালোবাসার কারণে ফলশ্রুতিতে হয়ে থাকে চির অম্লান। মি. নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের কল্যাণকর কাজের জন্য কিন্তু মানুষ তো অকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করার কারণে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও সম্মানজনক পুরুস্কারের ব্যবস্থা করে যান ৬টি মানব কল্যানে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে প্রতি বছর মানুষের কল্যানে কাজ করতে। কখনো কখনো তা অবশ্য হিতে বিপরীত হয়ে যায়।

আমার বিশ্বাস সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত ‘বন্ধুত্ব। অটুট থাকবে, থাকবে ভালো-বাসার বন্ধন, প্রেমের নিবন্ধনা। বন্ধুত্ব কখনো হেরে যায় না বন্ধু হেরে যায়। বন্ধুর ভুল বোঝা- না বোঝা কিংবা অবহেলা/ অবমূল্যায়নের কারনে বন্ধুত্বের ফাটল ধরে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, সম্পূর্ণ নিবেদন, অনুভব, নিঃস্বার্থ মনোভাব, পরোপকারী ব্যক্তিত্ব, সময়ের মূল্যায়ন, অংশিদারিত্ব, অগ্রাধিকার প্রদান, মূল্যবোধ সব সময়ের সারথী, প্রনয়, প্রেম, প্রানের আকুতি ইত্যাদি।

পৃথিবীর সকল প্রাণীর, মানুষের, জব ও জড়ের মধ্যে প্রেম অনবদ্ধভাবে বেঁচে থাকুক এবং চিরঞ্জীব হউক, সকলের সার্বিক মঙ্গল কামনায় করে আজকের বিচিত্র জীবনের সচিত্র প্রতিবেদন থেকে বিদায় নিলাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে