বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত করার আশঙ্কা আরো বেড়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড়টি আরও কিছুটা উত্তর-উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে আরও শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যাটাগরি ১ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি এখন মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টি আজ ৮ নভেম্বর সকাল ৯ টায় মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এটি আরও জোরদার হয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এবং পরবর্তী সময়ে উত্তর পূর্ব দিকে এগোবে।
প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার দুপুর অথবা বিকেলের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল সুন্দরবন ও খুলনায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল,চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটে হালকা থেকে মাঝারি থেকে বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে এরই মধ্যে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি সত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলাহয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের ভেতরে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা সর্বোচ্চ দমকা হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আরও শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যাটাগরি ৩ ক্ষমতাসম্পন্ন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে রুপান্তর হতে পারে।
এটি ভারতের উড়িস্যা রাজ্যের একদম নিকটবর্তী অঞ্চল দিয়ে রিকার্ভ করে পশ্চিম বাংলা উপকূল টাচ করে দক্ষিণ পশ্চিম বাংলা উপকূলে প্রবল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে। সাগর ওই স্থানে প্রচণ্ড উত্তাল আছে এবং আরও বেশি উত্তাল হতে যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রমকালে দেশের উপকূলীয় জেলা সমূহে নিচু এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চ সুনামি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব ধিরে ধিরে উত্তর বঙ্গোপসাগরে পড়তে শুরু করছে।
সকল প্রকার মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে না যাবার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ মুহূর্তে সরকারি আবহাওয়া সংস্থা দেশের সকল সমুদ্র বন্দরে ৩ নাম্বার সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আগামি ১০ নভেম্বর ভোররাত থেকে দুপুরের ভেতরে সাতক্ষীরা পশ্চিম বাংলা বর্ডারের পার্শবর্তী এলাকায় প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত করতে পারে। এসময় বাতাসের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহী, রংপুর বিভাগে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। ওই সময় খুলনা, বরিশাল চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় প্রবল ভারি বর্ষণ হতে পারে।
অপরদিকে দেশের আকাশ আংশিক মেঘলা আছে। দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর দুবলার চরের রাস মেলা দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্থগিত করা হতে পারে।