বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান মিজানকে সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে ২৫ জুন সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে ‘কন্সপিরেসি লিক’ নামক একটি চ্যানেলে মেজর মিজানের কথোপকথনের দুটি অডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
যাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাকে নাশকতার ষড়যন্ত্রের কথা বলতে শোনা গেছে।
যদিও ‘কন্সপিরেসি লিক’নামের ইউটিউব চ্যানেলটি ২৫ তারিখেই তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে এ দুটি ক্লিপ ছাড়া আর কোনো ভিডিও নেই। ২৫ তারিখ রাতে ভিডিওটি আপ করা হলেও সবার জন্য ভিডিওটি উন্মুক্ত করা হয় মঙ্গলবার সকালে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মেজর মিজান গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের নেতা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।
ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ নির্বাচনের দিন বিএনপির তিনজন লোককে আওয়ামী লীগের ব্যাচ পরে নাশকতা করার কথা ছিল।
তবে নির্বাচনের আগের রাতই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকা পড়ে যান মিজান।
তাকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুরে নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এ সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, মেজর মিজানুর গুলশান-১-এর আট নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা।
সোমবার রাত ১টার দিকে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্ম পরা পুলিশ ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিজানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বিএনপি নেতা মেজর মিজানকে গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছেন।
মিজানের অডিওতে কী আছে সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে ‘কন্সপিরেসি লিক’ নামক একটি চ্যানেলে গতরাতে মেজর মিজানের কথোপকথনের দুটি অডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম অডিওটির ব্যাপ্তি ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড ও দ্বিতীয়টির ব্যাপ্তি ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের।
দুটি অডিওতে মেজর মিজান ও যুবদল নেতা সাইফুলই আলাপ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।
প্রথম অডিওর কথোপকথন
সাইফুল : স্লামালাইকুম।
মেজর মিজানুর রহমান : ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো?সাইফুল : আছি মোটামুটি।
মিজান : আচ্ছা, তোমাদের এখান থেকে যে কাশিমপুর ইউনিয়নের যে ভোটকেন্দ্র, কতটুক দূর?
সাইফুল : মানে আমাদের পাশেরডা হইলো এক নম্বর ওয়ার্ড।
মিজান : হ্যাঁ, এটা তোমাদের এখান থেকে কতটুকু দূর, ভোটকেন্দ্রটা?
সাইফুল : এই ১৮ কিলো হইবো। এক নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্র হইলো তিনটা।
মিজান: আচ্ছা, ওখানে তোমাদের ক্লোজ বন্ধুবান্ধব আছে?
সাইফুল : হ্যাঁ।
মিজান : আচ্ছা, এখানে আমাকে একটা ছেলে পারলে দু্টাই ছেলে দাও। যারা আওয়ামী লীগের ব্যাচ লাগিয়ে ঘুরতে পারবে। এ রকম কিছু ছেলে ম্যানেজ করতে পারবা?
সাইফুল : হ্যাঁ, এ রকম আছে।
মিজান: আছে? প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের লোক নাও, যারা মনে মনে বিএনপি। আছে এমন?
সাইফুল : জি আছে।
মিজান : তিনটা ছেলে সিলেক্ট করো। তিনটা ছেলে সিলেক্ট করো, হ্যাঁ? ওরা নৌকার ব্যানার নিয়ে ঘুরবে। ওদের আমি বলে দেবো। ওদের টাকা-পয়সা দিয়ে দেবো নে। আমি ইলেকশনের দিন যন্ত্রপাতি দিয়ে দেবো নে। তুমি ছেলে তিনটা আগে সিলেক্ট করো। তিন সেন্টারের জন্য তিনজন। ওকে?
সাইফুল : ওকে?
মিজান : ওকে। শোনও, শোনও শোনও শোনও। যে পোলিং সেন্টারটা, মানে যে কোনো তিনটা পোলিং সেন্টারের যে কোনো একটা সেন্টারের পাশে আমাদের লোকের বাড়ি থাকতে হবে। যে বাড়ির জানালার পাশে বসে… দোতলা কিংবা তিনতলা বাড়ি থাকলে ভালো হয়।
সাইফুল : আমি রেডি করবো নে।
মিজান: হো হো রেডি করো, আর তিনটা ছেলেকে রাখবা, অন্য কাজে। ওই তিনটা ছেলে আওয়ামী লীগের ব্যাচ লাগিয়ে ঘুরবে।
সাইফুল : আচ্ছা, ঠিক আছে।
মিজান : আচ্ছা, ঠিক আছে।
দ্বিতীয় অডিওর কথোপকথন
সাইফুল : স্লামালাইকুম।
মেজর মিজানুর রহমান : ওয়ালাইকুম সালাম। আচ্ছা, তোমার খবরের বার্তা কী? কদ্দুর কী করতে পারতেছো?
সাইফুল : ওই লোক ঠিক করছি। বাসাডা ঠিক করতে পারি নাই এখনও।
মিজান : একটা বাসা ঠিক করো। ২/৪/৫ হাজার যদি দিতেও হয়, দিয়ে দাও।
সাইফুল : মানে একটা বাসা ঠিক করে দেব?
মিজান : মানে সেন্টারের পাশে। কথাটা বুঝছো?
সাইফুল : হ্যাঁ।
মিজান: এই লোকগুলিকে তোমাকে আনতে হবে… এই… তুমি রেডি থাকো। কয়জন লোক দিবা? একজন নাকি দুইজন?
সাইফুল : চারজন দেওয়া যাবে, চার কেন্দ্রে চারজন। এক নম্বর ওয়ার্ডে চার-পাঁচজন দেওয়া যাবে।
মিজান : আচ্ছা, তোমার কথাটাই থাক। চার কেন্দ্রে চারজন। সাহসী ছেলে রেডি রাইখো। সাহসী যেন হয়। হাত-পা যেন না কাঁপে।
সাইফুল : এটা কোনো সমস্যা না।
মিজান: হ্যাঁ। এগুলারে একটা গাড়ি নিয়া ঢাকায় চলে আসবা। ওদের আমি শিখাইয়া, ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দিবো। বুঝতে পারছো?
সাইফুল : হ্যাঁ।
মিজান : নাকি বুঝো নাই?
সাইফুল : না বুঝছি।
মিজান : ওদের নিয়া ওইখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসবা। ওদের আলাদা টাকা দিয়ে দিবো। কোনো সমস্যা নাই।
সাইফুল : হ্যাঁ।
মিজান : ওদের শিখাইয়া দিতে হবে। একবার শিখাইয়া ওদের একবার-দুইবার ট্রেনিং দিতে হবে। বুঝতে পারছো?
সাইফুল : আচ্ছা।
মিজান : তুমি চারটা লোক রেডি করো। খাবার-দাবার খাও। আমি আমার জিনিসপত্র রেডি করি। তুমি নিয়া আসবা। আমি বলবো নে কোথায় আসবা। গুলশানে, উত্তরায়, যে কোনো জায়গায়, বুঝো নাই?
সাইফুল : হ্যাঁ।
মিজান : তুমি ওদের নাম্বার-টাম্বার নিয়া রেডি করো। হাত খরচ দিয়া দিব নে। একবার-দুইবার ট্রেনিং দিয়া দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
সাইফুল : ওকে।
মিজান : ওকে।