অনলাইন ডেস্ক : হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত যকৃতের প্রদাহ। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে ভাইরাসজনিত সংক্রমণই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী। হেপাটাইটিস সৃষ্টিকারী ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের। হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’-এর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং জীবনঘাতী।
সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালন, সংক্রমিত ইনজেকশনের সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার, আক্রান্ত মা থেকে গর্ভস্থ সন্তান, রোগীর মুখের লালা, যৌনরস, শরীরের যে কোনো নিঃসৃত রস থেকে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস হতে পারে। মাদকাসক্তরা একই সুচে একাধিকজন মাদক গ্রহণ করলেও আক্রান্ত হতে পারে ‘বি’ ভাইরাসে। এটি শুধু ভয়ঙ্করই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ দুরারোগ্যও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ থেকে লিভার নষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস রক্তে ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে প্রধানত সুস্থ ব্যক্তিতে এ ভাইরাস প্রবেশ করে। বি ভাইরাস যেসব কারণে হয়, প্রায় একই ধরনের কারণে ‘সি’ ভাইরাস বিস্তার লাভ করে। এ ছাড়া শেভিং রেজার, ব্লেড, খুর ব্যবহারের মাধ্যমেও এ রোগটি ছড়াতে পারে। শরীরে একবার হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস প্রবেশ করলে তা শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন তৈরি করে। এ ভাইরাসও ভয়ঙ্কর ও দুরারোগ্য। লিভার নষ্টসহ জটিলতা সৃষ্টি করে এবং প্রাণঘাতী।
অন্যদিকে, হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দুটি খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। এ ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়ায় না। তাই কোনো জন্ডিস বা হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত মা তার সন্তানকে দুধ খাওয়াতে ভয় নেই।
রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। এ সময় ক্ষুধা, বমি বমি ভাব ও বেশ ক্লান্তি লাগে। তাই রোগীর রুচি অনুযায়ী স্বাভাবিক রান্না করা খাবার খেতে দেওয়া উচিত। বিশুদ্ধ পানি পান করুন। খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার পানি অন্তত ৩০ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করিয়ে পান করুন। যারা হেপাটাইটিস ভাইরাস বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্য মদ ও অ্যালকোহল নিষিদ্ধ। যারা অতিরিক্ত মদ্যপায়ী নন, তাদেরও সিরোসিস হতে পারে। স্বাভাবিক হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্ত রোগীকে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে। যদি সিরোসিস হয়েই যায়, তাহলে লবণ কম খেতে হবে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না। ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্তদের ১০-১৫ বছরের মধ্যে তাদের প্রায় অর্ধেকই লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ‘সি’ ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা নিরাময় সম্ভব। ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্তরা মাঝে মাঝে পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা অনুভব করেন। এ ছাড়া দুর্বলতা ও ক্ষুদামন্দাও হয়ে থাকে। ভ্যাকসিনেশন হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর। ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের সন্তানও আক্রান্ত হতে পারেন। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।