অনলাইন ডেস্ক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ওয়াহিদুল হককে (৬৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বারিধারার জে ব্লকের বাসা থেকে থেকে তাকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।

গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে। বুধবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে জানান ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তিনি জানান, আসামি ওয়াহিদুল হক একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালন কালে রংপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওয়াহিদুল হক ঢাকা গুলশানের ৩৫ নম্বর রোডের বাসা নম্বর ১/এ, অ্যাপার্টমেন্ট জি-৪ এ বসবাস করছেন।

প্রসিকিউশনের আবেদনে বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইবুনাল মঙ্গলবার সকালে মো. ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রফতারি পরোয়ানা জারি করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ। তিনি  বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা, গণহত্যা চালিয়েছিলেন আসামি ওয়াহিদুল হক। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী আরও অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়। সে প্রেক্ষিতেই তদন্ত শুরু হয়। ওয়াহিদুল হক অত্যন্ত প্রভাবশালী। তদন্তকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা ছিল তার।

তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদুল হক ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা-গণহত্যা সংঘটিত করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়। একাত্তর সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ’ থেকে ৬শ’ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালকে ধরে এনে মেশিনগান দিয়ে তাদের হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদরের চন্ডীবরদী গ্রামে। বাবা মৃত শামসুল হক। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে যান। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজ্যুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই’র পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুন:নিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সমকাল