পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক মাসের বেশি সময় ধরে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হলো গত ২৩ মে। এতে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বিজেপি গত ২০১৪ সালের থেকেও ভালো ফল করেছে যা ছিল অপ্রত্যাশিত। জোট ছাড়াই বিজেপি একাই ৩০০’র বেশি আসন পেয়েছে।
অথচ ২০১৪ সালে দলটি পেয়েছিল ২৮২ আসন। আর বিজেপি জোট পেয়েছিল ৩৩৬ আসন। এবার জোটের দিক থেকেও আসন সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বিজেপির জন্য কি এ জয় অপ্রত্যাশিত ছিল? তা একেবারেই না। খোদ বিরোধীরাই বলছেন এ কথা। আর যে মোদি জোয়ারকে মনে করা হচ্ছিল ম্লান হয়েছে তা হয়ইনি বরং আরো উজ্জ্বল হয়েছে। মোদিকে বিরোধীরা ‘হিটলার’ বলে গালি দিলেও সেই একটি মুখই অর্থাৎ মোদি ম্যাজিকই বিজেপির জন্য অন্যতম নিয়ামক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ৫ বছরে দেশ শাসন করার পর কিছু হলেও তো জনপ্রিয়তা কমার কথা কিন্তু সেক্ষেত্রে মোদির জনপ্রিয়তা আরো বাড়ল। সেটি কোন কৌশলে? আসলে বিজেপির নির্বাচনী কৌশলই বিজেপিকে জয় এনে দিয়েছে। এবার সবচেয়ে যে বিষয়টি আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হলো উত্তরপ্রদেশে আখিলেশ-মায়াবতী জোট। আর এই জোটের হিসাব মাথায় রেখে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় নতুন পরিকল্পনা করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবার কড়া নজর রেখেছিল। প্রচারণায় সময়ও বেশি দিয়েছে। আর তার ফলও হাতেনাতেই পেয়েছে।
এদিকে বিজেপিবিরোধী যে প্রচারগুলো ছিলো তার মধ্যে বেকার সমস্যা, নোটবন্দি, উগ্র জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ। কিন্তু ফলে দেখা গেল এসব কোনোটাই বিজেপির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সেগুলো মনে করা হয়েছিল বিজেপির জন্য দুর্দিন নিয়ে আসবে ভোটাররা। ভোট দেয়ার সময় সেগুলো আমলে নেয়নি। আর মোদি আমলে আর যাই হোক ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী ভীতে দাঁড়িয়েছে। দেশটি বিশ্বে ষষ্ঠ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। মোদির আমলে যে দুর্নীতির ধোয়া তুলে কংগ্রেস তাকে ‘চৌকিদার চোর’ বলে আখ্যা দিয়েছিল সেটিও ম্লান হয়ে গেছে। বিষয়টি যে শুধু সমাজের ওপর শ্রেণির মামলা তা বোঝা গেছে। আমজনতার মাঝে ঠিকই মোদির জনপ্রিয়তা রয়েছে তা প্রমাণ হলো।
এছাড়া বিজেপি যে কারণে বেশি এগিয়ে রয়েছে তা হলো কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্রচার। সমাজের ওপর তলার মানুষ যতই এটিকে নেতিবাচক হিসেবে প্রচার করুক না কেন সাধারণ মানুষ হিন্দুত্ববাদকেই নিরাপদ মনে করছে। এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে বিজেপির বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব বিল ও আদার কার্ড নিয়ে যে উত্তাপ ছিল ভোটে সে প্রভাব পড়েনি। বিজেপি আসলেই তুখোড় রাজনীতিক কৌশলের পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে দেশটির বিরোধী দল হিসেবে সংসদে থাকছে কংগ্রেস। কিন্তু রাহুল গান্ধী নিজেকে মোদির বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হলেন। আসন সংখ্যা বাড়লেও কংগ্রেসের ঝুলিতে বলার মতো তেমন কিছুই রইল না। কংগ্রেসের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হলো দিশাহীনতা ও নেতিবাচক প্রচার।
লেখক : সাংবাদিক