হিসাব খুলেই রেখেছেন মাত্র কিন্তু লেনদেন নেই। তবে তার দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো যখন জানতে পারলেন তার হিসাব নম্বরে ৩ বিলিয়ন রুপি (৩০০ কোটি রুপি) জমা হয়েছে। দরিদ্রদশা থেকে একেবারে শতকোটি রুপির মালিক! তবে কিছুতেই বিশ্বাস হয় না ।
মোহাম্মদ রশিদ। পেশায় করাচির একজন অটোরিকশাচালক। তার মেয়ের আবদার তাকে একটি সাইকেল কিনে দিতে হবে। মেয়ের আবদার পূরণ করতে টাকা সঞ্চয় করতে শুরু করেন দরিদ্র এই বাবা। শত কষ্টের মাঝেও ৩০০ রুপি জমাতে সক্ষম হন। তবে এ টাকা জমাতে তার সময় লেগেছে পুরো এক বছর। কারণ অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় করেন আর সংসারের যা ব্যয়, তাতে সঞ্চয়ের সুযোগ খুব কমই হয়। ব্যাংকে একটা হিসাব খুলেছিলেন।
তিনি রীতিমতো ঘামতে থাকেন এবং ভয়ে শরীর গুটিয়ে আসে। তার এ অস্বস্তি আরও বাড়ল যখন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা থেকে ফোন এলো। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৪৩ বছর বয়সী এই অটোরিকশাচালক। তবে বন্ধু-শুভানুধ্যায়ী আর পরিবারের লোকজন তাকে বোঝাতে সক্ষম হন দেখা করাটাই শ্রেয় হবে। তিনি করলেনও তাই।
এ যাত্রা থেকে বেঁচে গেলেন রশিদ। তাকে জানানো হলো প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের নেয়া কালোটাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে তার মতো এমন দিন আনেন দিন খান লোকজনের ব্যাংকে শত শত কোটি রুপি ঢুকছে। অনেকের ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের নামেও দিব্যি ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে শত শত কোটি রুপির লেনদেন চলছে। আর এসব হচ্ছে মানি লন্ডারিংয়ের কারণে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভাবেই পাকিস্তানের ধনী লোকজন দরিদ্র লোকজনের ব্যাংক হিসাবে অবৈধ অর্থ লেনদেন করে বিদেশে পাচার করছেন। এরসঙ্গে অনেক ক্ষমতাধর লোক জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। এতে দেখা যায়, হাজার হাজার দরিদ্র লোকের নামে ভুয়া ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। প্রায় ৬০০ কোম্পানি ও ব্যক্তি এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
রশিদ বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি ভাড়ায়চালিত অটোরিকশা রাস্তায় বের করা বন্ধ করে দিই। কারণ আমার মনে হতো, রাস্তায় বের হলে তদন্ত সংস্থার লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। চিন্তায় আমার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে মেয়ে নাবিহা রশিদের আবদার পূরণ করতে একটি পুরাতন সাইকলে কিনে দেন। এজন্য তার খরচ হয়েছে ৩০০ রুপি। আর এ টাকা তার সারা বছরের জমানোর ফল। কারণ তিনিতো আর কোটিপতি নন। এসব লোক কি আর রাতারাতি কোটিপতি হতে পারেন। এটা আলাদিনের চেরাগ পেলেই বোধহয় সক্ষম। তার আগে নয়।